টেকনাফে কোচিং বানিজ্য! প্রাইমারী স্কুল শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাচ্ছে না!

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৮ years ago

খাঁন মাহমুদ আইউব :
কক্সবাজার’র টেকনাফ শিক্ষা অনগ্রসর এই জনপদে কলেজ,মাধ্যমিক স্কুল ও প্রাইমারী স্কুল গুলোকে পুজি করে কোচিং বানিজ্য গড়ে তুলেছে।সরকারে নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নাকের ডগায় এই সব শিক্ষা ফেরী চলছে।প্রতিটি এইসব অবৈধ ধান্ধা বান্ধব কোচিং সেন্টার গুলো গড়ে তুলেছে স্কুল কলেজের শিক্ষকরা।প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকের খাতা রেজাল্ট দেখা হয় কলেজ ছাত্র দিয়ে।তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব কি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।প্রতিটি প্রাইমারী স্কুলের কোচিং সেন্টার থেকে ধান্ধা প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মাধমিক ও কলেজ পর্যায়ে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা।
অনুসন্ধানে খোঁজ মেলেছে,শহরে একমাত্র সরকারী কলেজ,২টি প্রধান মাধ্যমিক ও বেশ ক’টি প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে প্রতিষ্টান গুলোর শিক্ষা ফেরী ওয়ালাদের পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্টান কেন্দ্রীক ব্যাক্তিগত কোচিং সেন্টার গড়ে ঊঠেছে।সরেজমিনে দেখাগেছে, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে বিডি কোচিং ব্যানার পোষ্টার সাটিয়ে ব্যাবসা প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছে।বাকী প্রতিষ্টান গুলো নাম বিহীন স্কুল কলেজের অদূরে এবং কয়েকটি প্রাইমারী স্কুলের শ্রেনী কক্ষেই পড়ানোর দৃশ্য উঠে এসেছে।বাস ষ্টেশন এলাকায় বার্মিজ প্রাইমারী স্কুলের ২জন শিক্ষক স্কুল আসবাব ব্যবহার করে শ্রেনী কক্ষে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দিব্বি।প্রাইমারী পর্যায়ে মাথা পিছু ৫শ টাকা এবং ৬ষ্ট থেকে একাদশ শ্রেনী পর্যন্ত ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা মাসিক আদায় করা হয়ে থাকে সরেজমিনে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।কিন্তু অদৃশ্য কারনে শিক্ষা প্রাশাসন নিরব থেকে যাচ্ছে।প্রতিটি কথিত কোচিং সেন্টার ৭০/৮০ জন ছাত্র ছাত্রী ২টি গ্রুপে ভাগ করে ভিন ভিন্ন সময়ে পড়ানো হয়।
এদিকে অনেকটা ভোর বেলায় ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে দেখে জানতে চাইলে,পাইলট স্কুল পার্শ্ববর্তী এক দোকানদার জানিয়েছেন,কখনো এই সময়ে ছেলেদের আগে মেয়েরা ও এসতে দেখা যায়।সুতরাং বিগত সময়ে টেকনাফ কলেজের শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী অক্রান্ত হওয়ার ঘটনা পুনঃরা বৃত্তির আশংকা প্রকাশ করছেন এইসব পার্শ্ববর্তী লোকজন ও স্থানীয় সুশীল সমাজ।এইসব বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতক সেচ্চাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাকে গনমাধ্যম কর্মী দিয়ে ফোনে চাপ প্রয়োগের মতো ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে। অপরদিকে উপজেলা অফিস পাড়া (পল্লানপাড়া) এলাকায় অবস্থিত কোচিং সেন্টার থেকে নিরাপত্তা জনিত প্রশ্নের কারনে নিহার নামের এসএসসি ফল প্রার্থী এক ছাত্রীকে কোচিং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কাইয়ুকখালী পাড়া এলাকার একজন অভিবাবক।
এদিকে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,সরকার কর্তৃক কোচিং সেন্টার বন্ধের যতো জোর পদক্ষেপ চলছে।তবে স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলেই সরকার ও দলীয় সাংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুন করার জন্য তার নাম ভাঙ্গীয়ে উপজেলা প্রশাসন কে ম্যানেজ করার ফলে এসবের বিরুদ্ধে আর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনা।স্কুল ক্লাসে পাঠদানে ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভর করা হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে,বিডি কোচিং’র দায়িত্বরত নাফিজ জানান,ক্লাশে চল্লিশ মিনিটে শিক্ষার্থীরা বেশী কিছু শিখতে পারেনা তাই যারা দূর্বল তাদের জন্য এই কোচিং খোলা হয়েছে।১০ম শ্রেণীর ২জন ছাত্রীর অভিবাবক জানান ভিন্ন কথা,স্কুলের শিক্ষক নাম ভাঙ্গীয়ে ছাত্র/ছাত্রী সংগ্রহ এদের কাজ।শিক্ষকদের রেশা-রেশীর কারনে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার দেয়ার বেলায় হেরফের করার অভিযোগ রয়েছে কোচিং সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে।
উক্ত নাফিজ কে স্কুল শিক্ষক কর্তৃক কোচিং বানিজ্য চালানোর বৈধতা জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেন নাই বরং অন্যন্য কোচিং শিক্ষক কি পড়ায় তা বলে এড়িয়ে যান।এই সব বিষয়ে সদর ইউনিয়ন প্রাইমারী স্কুলের প্রবীণ প্রধান শিক্ষক মি.শওকত আলী জানালেন,কোচিং সেন্টার গুলো প্রাইমারী স্কুলকেও গ্রাস করেছে। মাত্র১ঘন্টার ক্লাশে ৩০/৪০ জন শিক্ষার্থীরা কি শিখবে ! সরকার আগের চেয়ে দুই গুন সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও অবৈধ অক্কাদিয়ে এই সব কোচিং ধান্ধা নিয়ে কট্টর সমালোচনা করেন এই প্রবীন শিক্ষক।তবে বার্মিজ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নুর মোহাম্মদ কোচিং বানিজ্য নিষিন্ধ জেনেও বেতন পোষায়না তাই কোচিং থেকে প্রতি মাসে ৬০/৬৫ হাজার টাকা ধান্ধ হয় বলে তিনি স্বীকার করেছেন।অনুসন্ধানে দেখা গেছে ২০১২ সালে স্কুলে নিয়োগের আগেও তিনি শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে ফেরী করে বেড়াতেন।কিন্তু পরীক্ষার খাতা কিভাবে কলেজ ছাত্রের হাতে গেলো প্রশ্নে জবাবে অস্বীকার করেছেন একই স্কুলের শিক্ষক মি. মুফিজ।কিন্তু ৪র্থ শ্রেণীর প্রথম সাময়ীক পরীক্ষার খাতা গত ২রা মে এক জন কলেজ ছাত্রের হেফাজতে পাওয়ার প্রমান রয়েছে।
এইসব বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মি সুভাশ বুশ মুঠোফুনে জানান,দূর্বল শিক্ষার্থীদের ঠেনে তুলার জন্য পড়ানো হচ্ছে তবে তার বিনিময়ে টাকা নেয়ার নিয়ম নেই এবং বিষয়টি তিনি জানেন না, পরীক্ষার খাতা অন্য কাউকে দিয়ে বিচারকরার সুযোগ নেই।তাই বিষয় গুলো খতিয়ে দেখে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারী ভাবে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
অনতি বিলম্বে শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে ফেরী করার প্রথা রোধ না করলে মেধার বিকাশ ঘটবেনা বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষিত মহল।এই ব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তারা।অন্যতায় শিক্ষা প্রশাসন সহ অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাংসদ ও শিক্ষা মন্ত্রনালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করেছন।

ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ (পর্ব ১)