রোহিঙ্গা তালিকা যাছাই ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দেখতে আসা মিয়ানমার প্রতিনিধি দল টেকনাফ অবস্থান করছে

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৩ years ago

হুমায়ূন রশিদ : বাংলাদেশ কর্তৃক মিয়ানমারে হস্তান্তরকৃত রোহিঙ্গা তালিকা যাছাই করে দেশের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক, রোহিঙ্গাদের সাথে স্বাক্ষাত এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দেখতে দেশের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ অবস্থান করছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিষয়ক ১৭সদস্যের প্রতিনিধি দল।

১৫ মার্চ (বুধবার) সকাল ১১টারদিকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা তালিকা যাছাই ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকি বিষয়ক ১৭সদস্যের প্রতিনিধি দল বিশেষ স্পীডবোটযোগে টেকনাফ জেটিঘাঁট দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এসময় শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। এরপর প্রতিনিধি দলকে টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন রেস্ট হাউসে নেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশ কর্তৃক মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য হস্তান্তরকৃত তালিকা যাছাই-বাছাই এবং তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের সাথে স্বাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্তৃপক্ষের সাথে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল এখন টেকনাফে অবস্থান করছেন। সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন-শৃংখলা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন সংস্থার জনবল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

বিকালের দিকে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সংবাদকর্মীদের জানান,রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্য্যক্রমের প্রাথমিক প্রস্তুতিস্বরূপ মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা টেকনাফে এসেছেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এছাড়াও প্রতিনিধি দলটি স্বদেশ মিয়ানমার ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই বাছাই ও রোহিঙ্গাদের সাক্ষাত নেন।

শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরো জানান, ২০১৮সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ৮লাখ ৮২হাজার রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেয়া হয়। যাচাই বাছাই করে মিয়ানমার ৬৮হাজার রোহিঙ্গাদের ফিরতি একটি তালিকা পাঠায়। তাদের পাঠানো তালিকায় অনেক পরিবারের সদস্যরা বাদ পড়ে। বিষয়টি তাদের অবহিত করার পর বিষয়টি বিবেচনায় নেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে তারা বাদপড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করার পর বিলম্ব হলেও মিয়ানমার প্রতিনিধি দল উপরোক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন।

মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর দিকে পরিবার ভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছেন। এরমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ’খানেক রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে দেওয়া তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার।

উল্লেখ্য,২০১৭ সালে মিয়ানমার হতে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নির্যাতন ও হত্যায় বিতাড়নের ৩ মাসের মাথায় নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তিসই হলেও গত ৬বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোন ধরনের অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নির্ধারিত সময়ে ১ম দফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবারো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারীতে সেনা অভ্য্্ুত্থানে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্র্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ চীনসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সাথে কুটনৈতিক তৎপরতার কারণে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নিতে রাজি হয়। অবশেষে মিয়ানমার
কর্তুপক্ষের হাতে হস্তান্তরকৃত রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের পর সবকিছু ঠিক থাকলে শীঘ্রই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ####