১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৩ years ago

সোলতান আহমদ : আজ রক্তঝরা ১৫ আগষ্ট; কেঁদে ছিল আকাশ, ফুঁপিয়ে ছিল বাতাস। বৃষ্টিতে নয়, ঝড়ে নয়- এ অনুভুতি ছিল শোকের। পিতা হারানোর শোক। প্রকৃতি কেঁদেছিল ; কারণ মানুষ কাঁদতে পারেনি। ঘাতকের উদ্ধত সঙ্গিন তাদের কাঁদতে দেয়নি। কিন্তু ভয়ার্ত বাংলার প্রতিটি ঘর থেকে এসেছিল চাপা দীর্ঘশ্বাস। কী নিষ্ঠুর, কী ভয়াল, কী ভয়ংকর সে রাত। যা এত বছর পরও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের জনপদের ধুলিকণা ভুলতে পারেনি। ভুলতে চাইনি, ভুলতে পারবে না স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অশ্রুভেজা, কলংকময় রাতের কথা; ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাতের কথা; সে রাতে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বপরিবারে নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বছর ঘুরে রক্তের কালিতে লেখা সে দিন-রাত আবার ফিরে এসেছে। আজ আমার কবি শামশুর রহমান এর কবিতার মতো বলতে ইচ্ছে করছে, “ধন্য সে পুরুষ যার নামের উপর রৌদ্র ঝরে। চিরকাল গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টি ধারা যার নামের উপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া। ধন্য সেই পুরুষ যার নামের উপর ঝরে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ের ধ্বনি।” সম্মানিত পাঠক বঙ্গবন্ধু নিছক একজন ব্যক্তি কিংবা একটি রাষ্ট্রের স্থপতি নন ; একটি জাতির স্বাধীনতার জন্য অসামান্য ত্যাগ স্বীকারকারী রাজনীতিক নন; তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষের নেতা, একজন মহান নেতা। যার কাছে সব সময়ই সর্বোচ্চ অধিকার পেয়েছে ‘দুখী’ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি সারা জীবন এই দুখী মানুষের কল্যাণেই তাদের মুক্তির জন্যই নিরলস ও প্রাণপন চেষ্টা করে গেছেন। তিনি সময়ের প্রয়োজনে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার সংরক্ষণের জন্যই। তিনি বাঙ্গালী ম্যাগনাকাটা বলে পরিচিত যে ০৬ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন সেখানেও ছিল সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দেয়ার সময় ও শুধু স্বাধীনতার কথা বলেননি; বলেছেন মানুষের মুক্তির কথাও। তাইতো তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলার এক হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান একমাত্র নেতা, যিনি রক্তে, বর্ণে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে ও জন্মসূত্রে পুরো দস্তুর বাঙালী। কন্ঠ তার বজ্র নির্ঘোষ। তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ ক্যারিশমায় জনগন মহাবিষ্ঠ হয়ে এক সাগর রক্ত দিয়ে অর্জন করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি তেজোদীপ্তি, অসীম সাহস ও দেশপ্রেমের অর্ন্তগত প্রবল অনুভূতির ধারাক্রমে যখন একটি রাষ্ট্রের স্রষ্টা হয়ে উঠেন, তখনই বিশ্বাসঘাতকেরা তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করেন। থমকে দেয় আধুনিক সমাজব্যবস্থার স্বপ্নকে।

সম্মানিত পাঠক, একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার ঘটনার সঙ্গে ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট মধ্য রাতের বর্বর হত্যাকান্ডই তুলনীয় হতে পারে। যেখানে নারী শিশুসহ নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরে গণহত্যা করলো আর ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট মধ্যরাতে গণহত্যা চালালো পাক হানাদারদেরই এদেশীয় দোসর কিছু বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আস্থাহীন দেশীয় কিছু রাজনীতিকের পাশাপাশি বিপদগামী কিছু সেনা সদস্য। বিশ^ ইতিহাসে যা নির্মম হত্যাকান্ড হিসেবে চিহ্নিত।

সম্মানিত পাঠক, বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম সেই পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন যে বন্ধন কোন দিন ছিন্ন হবার নয়। তিনি আজীবন ঔপনিবেশিক শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে, দারিদ্র পীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এমন এক অন্যন্য ভূমিকা রেখেছিলেন যার তুলনা বিরল। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন তার সব গুণ নিয়েই জন্মে ছিলেন ক্ষণজন্মা এ মহা পুরুষ। যার রাজনৈতিক জীবন ছিল বহু বর্ণিল, যার কন্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। তাই আজ কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয় ‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই, তবে বিশ^ পেত এক মহান নেতা আমরা ফিরে পেতাম জাতির পিতা…..’।

প্রিয় পাঠক আগষ্টের এই ১৫ তারিখে মেঘের অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল রাজধানী ঢাকা। জাতির জীবনে এক কলংকিত অধ্যায় শুরু হয়েছিল এই দিনে। ১৯৭৫ সালে এই দিনে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাঙালীর ইতিহাসের মহা নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মরেও অমর। বাঙ্গলীর হৃদয়ে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন ; তার অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য। বেঁচে থাকবেন তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী কর্মধারার মধ্যে।

পরিশ্রম আঘাত আর ত্যাগেই যার জীবন

Sultan Ahamed TEKNAF TODAY - সীমান্তের সর্বশেষ খবর
সোলতান আহমদ

মুক্তিযুদ্ধা (মুজিব বাহিনী)

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ

টেকনাফ উপজেলাধীন হ্নীলা ইউনিয়নের

সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও

১নং ওয়ার্ড শাখার সাবেক নির্বাচিত সভাপতি।