যেভাবে কুরআন অধ্যয়ন ও জাকাত আদায় করতে হবে

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৩ years ago

মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, অনুবাদ: মহিউদ্দিন মণ্ডল : রমজান মাসে আল্লাহর নবীর (স) কর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি রমজান মাসে ফেরেশতা জিবরাইল (আ)-এর সাথে কুরআন অধ্যয়ন করতেন এবং সেই মাসে তিনি প্রচুর দান-খয়রাত করতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬)।

কুরআন অধ্যয়ন করার অর্থ কুরআনের আরবি পাঠের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং কুরআনের ওপর চিন্তা-ফিকির করা। কুরআনে বলা হয়েছে : এটি একটি বরকতময় কিতাব যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে লোকেরা এর আয়াতগুলি নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে (৩৮:২৯)।

সমস্ত ভালো কথা ধ্যানের মাধ্যমে মানুষের কাছে আসে। একজন আরব কবি যথার্থই বলেছেন যে যখন মানুষ চিন্তামগ্ন থাকে, তখন সে সবকিছু দ্বারা উপদেশ প্রাপ্ত হয়:

اذا المرء کانت لہ فکرۃ
ففی کل شیء لہ عبرۃ

ইমাম আওজায়িকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কুরআনের আয়াতে ধ্যান বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেন যে মানুষের উচিত সেগুলি পড়া এবং তাদের বোঝা উচিত। (তাফসির ইবনে কাসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৯০)।

আমির ইবন আব্দুল কায়স বলেন, আমি নবীজীর একাধিক সাহাবীকে বলতে শুনেছি, ان ضیاء او نور الایمان التفکر অর্থাৎ ঈমানের আলো হলো মনন।

হজরত ওমর বিন আবদুল আজিজ বলেন : الفکرۃ فی نعم اللہ افضل العبادۃ অর্থাৎ আল্লাহর নেয়ামতের চিন্তা-ফিকির করা সর্বোত্তম ইবাদত। (তাফসির ইবনে কাছীর খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৮৫)

বাশার ইবনুল হারিস আল হাফি বলেন, لوتفکر الناس فی عظمۃ اللہ تعالی لما عصوہ মানুষ যদি আল্লাহর মহত্ত্বের ওপর চিন্তা-ফিকির করে, তবে তাদের কখনোই পাপ করা উচিত নয়। (তাফসির ইবনে কাসির খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৮৫)।

জাকাত ও সদাকাত

একইভাবে হাদিস অনুযায়ী আল্লাহর নবী (স) রমজান মাসে প্রচুর দান-খয়রাত করতেন। আসল কথা হলো, যখন কোনো ব্যক্তি জাকাত ও সদকার অধীনে কাউকে কিছু দান করে, তখন সে দৃশ্যত অন্য কাউকে দেয়। কিন্তু বাস্তবে, এটি দাতার নিজেরই সম্পদে পরিণত হয়। অন্যকে দান করে মানুষ নিজের পবিত্রতার ব্যবস্থা করে।

এতে করে মানুষ তার অন্তর থেকে সম্পদের ভালোবাসা বের করে দেয়। তিনি এই বিশ্বাসকে পুনর্নবীকরণ করেন যে তার কাছে যে সম্পদ রয়েছে তা আল্লাহর, তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এইভাবে সে নিজের মধ্যে এই অনুভূতি জাগ্রত করে যে তার উপর অন্যদের অধিকার রয়েছে।

জাকাত বা দান হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে দান করার প্রশিক্ষণ কিন্তু তার উচিত আল্লাহর কাছ থেকে তার পুরস্কার পাওয়ার আশা করা। তিনি একতরফাভাবে অন্য মানুষের উপকারকারী ও সাহায্যকারী হয়ে ওঠেন। তার জীবনে এমন মানুষের অধিকারের কথা বিবেচনা করা উচিত যাদের কাছ থেকে তার কিছু পাওয়ার আশা নেই।

জাকাত দেওয়া অন্যের জন্য উপকারী হওয়ার মতো। এইভাবে জাকাত মানুষের মনে করিয়ে দেওয়ার একটি উৎস যে আপনাকে এই পৃথিবীতে ভিক্ষুক হতে হবে না বরং দাতা হতে হবে। আপনার অধিকারের চেয়ে আপনার দায়িত্ব বেশি উপলব্ধি করতে হবে। নিজেকে এতটাই সক্ষম বানাতে হবে যে যেন সর্বদা আপনার হাত ওপরে থাকে, সেটা কোনোদিন যেন নীচে না হয়।

জাকাত হলো এক ধরনের ব্যবহারিক প্রার্থনার মতো। যে ব্যক্তি জাকাত প্রদান করে সে তা আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়ার জন্য প্রদান করে। সে অন্যের সেবায় রত হয় যাতে আল্লাহ তার কাজ করে দেন। তিনি একতরফাভাবে সাহায্য করেন যাতে আল্লাহ তাকে একতরফাভাবে তাঁর করুণা ও ক্ষমার ছায়ায় আশ্রয় দেন।

এই পৃথিবীতে, দৃশ্যত, একজন মানুষ গরিব, এবং অন্য মানুষ ধনী। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যেক মানুষই অভাবী। কারণ কারো সম্পত্তি ব্যক্তিগত নয়। প্রতিটি মানুষের সম্পদ আল্লাহর দান। একজন ধনী ব্যক্তি যখন একজন গরিব ব্যক্তিকে কিছু দেয়, তখন এই কাজের দ্বারা সে তার নিজের বাস্তবতাকে তার মনে সতেজ করে।

সে যেন মুখ দিয়ে বলছে আমি তোমার মতই। আল্লাহ চাইলে আগামীকাল আমার অবস্থা তোমার মত করে দিবেন এবং তোমার অবস্থাও আমার মত করে দিবেন।