ইকবাল হোমাইন : আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথায়? জ্বি টেকনাফ। কি বললেন? টেকনাফ! ইয়াবার চালান করেন নিশ্চয়? আরে আমি এগুলো করতে যাবো কেন? আমি একজন ছাত্র। আজকাল ছাত্র-শিক্ষক,হুজুর, ভালো মানুষ সবাই এগুলো করে।
টেকনাফের মানুষ কোথাও গেলে এগুলো অবশ্যই শুনতে হয়। কারণ আমাদের এলাকা ভৌগোলিকভাবে সীমান্তের পাশ্ববর্তী হওয়ায় চোরাকারবারি, অবৈধ চালান, মাদকের ছড়াছড়ি, মানব পাচার ইত্যাদি হয়। কিন্তু এর অর্থ টেকনাফের সবাই অবৈধ কাজে যুক্ত তা মনে করা অন্যায়। কারণ টেকনাফে যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এবং প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত।
২০১৭ সালের পর থেকে প্রায় ১০-১২ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আমাদের দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ সহানুভূতি দেখিয়েছে এবং যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। এখনো হয়তো অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা আসার পর থেকে স্থানীয় মানুষদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে যারা শ্রমিক বা দিনমজুর ছিলেন তাদের কাজ রোহিঙ্গারা কম পারিশ্রমিকে করার ফলে স্থানীয় শ্রমিক বা দিনমজুররা বেকার হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে নাফ নদী অবৈধ পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হওয়ায় সরকার জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার কারণে জেলেদের ও তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে।
যুবসমাজের কথা যদি বলতে হয়, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদক গ্রহনের প্রবণতা বেড়েছে এবং অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। এর দ্বারা আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই মুহুর্তে আপনি যদি টেকনাফের স্থানীয় কোন সংবাদ পত্র হাতে নেন প্রথমে আপনার চোখে পড়বে ‘অপহরণ’ শব্দটা। স্থানীয় মানুষদের মাঝে একটা শব্দ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। প্রতিদিন একজন রোহিঙ্গা ডাকাতের হাতে অপহরণ হচ্ছে। শুধু কী তাই, তারা মোটা অংকের টাকা দাবী করে। কোন পরিবার যদি সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি বা অসমর্থ হয় বা দেরী করে তাহলে অপহরণকৃত মানুষটাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এইভাবে একটা এলাকার পরিস্থিতি চলতে পারে না। যেখানে মা তার সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পায় সেখানে একটা মানুষ কীভাবে স্বাধীন হতে পারে। আমাদের কোথাও গিয়ে বিচার চাওয়া বা পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কোন লোক নেই। আমাদের এলাকার এই কঠিন পরিস্থিতি আর কতদিন চললে ও আর কত মায়ের বুক খালি হলে আমরা প্রতিবাদ করবো। এটার সঠিক সমাধান আমার কাছে নেই তবে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে করলে এই আতঙ্ক ও নির্যাতন থেকে আমার দেশের মানুষ রেহাই পাবে।
চলুন সবাই একসাথে প্রতিবাদ করি।
অনার্স ৩য়বর্ষ
চট্টগ্রাম কলেজ।