পদ্মা সেতুর ১শ টাকার স্মারক নোট ; ব্যাপক সাড়া

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ২ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : জাতির গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে অবমুক্ত করা ১০০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট সংগ্রহে সব শ্রেণিপেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। মাত্র দুই দিনেই প্রথম দফায় ছাপানো ১০ হাজার পিস স্মারক নোটের প্রায় সব কয়টি বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে তৃতীয় দিনে এসেই স্মারক নোটের বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নোটিশ ছাড়া হঠাৎ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে, এখন পর্যন্ত ১৭টি স্মারক মুদ্রা ও ৮টি স্মারক নোট অবমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রিত ১০০ টাকা মূল্যমানে স্মারক নোটটি গত শনিবার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বৃহস্পবিার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ২৬ জুন রবিবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস এবং পরে অন্যান্য শাখা অফিস থেকে পাওয়া যাবে। খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য নির্ধারণ

করা হয়েছে ১৫০ টাকা। আর ফোল্ডার ও খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের একাধিক কাউন্টারের মাধ্যমে স্মারক নোটটি বিক্রির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরেজমিনে দেখা যায়, গত রবি ও সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কাউন্টারগুলোতে স্মারক নোট কিনতে ব্যাপক ভিড় লেগে যায়। প্রচলনযোগ্য না হওয়ার পরও শখের বসেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নোটটি সংগ্রহ করতে আসেন। তবে প্রথম দিন থেকেই অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী স্মারক নোট কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে।

গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিল্ডিংয়ের নিচতলায় পদ্মা সেতুর স্মারক নোট কিনতে আসেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অবসরে যাওয়া গোপাল চন্দ্র। স্মারক নোট কেন সংগ্রহ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেমেয়ের জন্য পদ্মা সেতুর স্মারক নোট সংগ্রহ করতে এসেছি। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। আমার দরকার ছিল ৫টি। কিন্তু নিতে পারলাম ১টি।

রাজধানীর মাদারটেক থেকে স্মারক নোট সংগ্রহ করতে আসেন স্কুল শিক্ষিকা নারগিস আক্তার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতা নিয়ে মুদ্রিত স্মারক নোটটি সংগ্রহে রাখতে পারা অন্যরকম অনুভূতি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কাউন্টারগুলোতে স্মারক নোট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। টানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিক্রি বন্ধের নোটিশও। এতে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত পদ্মা সেতুর স্মারক নোট বিক্রয় বন্ধ। আগামী ৩ জুলাই থেকে পুনরায় বিক্রয় করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, পদ্মা সেতু উপলক্ষে মুদ্রিত স্মারক নোটটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত দুই দিনে ৯ হাজারের বেশি বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ বিক্রি বন্ধ করা হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুধবার থেকে নতুন টাকার বিনিময় শুরু হবে। হয়তো এ কারণেই আপাতত স্মারক নোট বিক্রি বন্ধ রাখার হয়েছে।

সাধারণত কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থান ও ঘটনাগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মুদ্রণ করা হয়ে থাকে স্মারক নোট ও মুদ্রা। জানা যায়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪০ টাকার স্মারক নোট, ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর উপলক্ষে ২০১২ সালে ৬০ টাকার স্মারক নোট, দ্যা সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ২৫ বছর পূর্তিতে ২০১৩ সালে ২৫ টাকার স্মারক নোট, বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ উপলক্ষে ২০১৩ সালে ১০০ টাকার স্মারক নোট, ২০১৮ সালের ২২ মার্চ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অভিযাত্রার গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তকে স্মরণীয় রাখতে ৭০ টাকার স্মারক নোট, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালে ১০০ টাকার স্মারক নোট ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপন উপলক্ষে ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট মুদ্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে ২০০১ সালে স্বর্ণ মুদ্রা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে স্বর্ণ মুদ্রা, বিজয়ের ২০তম পূর্তিতে ১৯৯১ সালে রৌপ্য মুদ্রা, গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস উপলক্ষে ১৯৯২ সালে রৌপ্য মুদ্রা, স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৭ সালে রৌপ্য মুদ্রা, বাংলাদেশ ব্যাংকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৭ সাল রৌপ্য মুদ্রা, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ১৯৯৮ সালে নিকেল মুদ্রা, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ১৯৯৮ সালে রৌপ্য মুদ্রা, আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ উপলক্ষে ২০১১ সালে রৌপ্য মুদ্রা, বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর উপলক্ষে ২০১১ সালে রৌপ্য মুদ্রা, বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর উপলক্ষে ২০১১ সালে রৌপ্য মুদ্রা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১১ সালে রৌপ্য মুদ্রা, জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ উপলক্ষে ২০১৩ সালে রৌপ্য মুদ্রা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশর্তবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে রৌপ্য মুদ্রা, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালে রৌপ্য ও স্বর্ণ মুদ্রা এবং বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২২ সালে রৌপ্য মুদ্রা বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।