হ্নীলায় পৃথক পাহাড়ি দূবৃর্ত্ত দলের হাতে অপহৃত-৫ ; দুপক্ষের সংঘর্ষে পালিয়ে ফিরল-৩

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৩ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদে পৃথক দূবৃর্ত্ত দল হানা দিয়ে ধান ও ক্ষেত পাহারা দেওয়া শিশু-কিশোরসহ ৫জনকে অপহরণ করেছে। পাহাড়ের ভেতরে দুই অপহরণকারী চক্রের গোলাগুলিতে একপক্ষ পিছু হঠায় রক্তাক্ত অবস্থায় ২জনসহ ৩জন ফিরে আসলেও এখনো ২জন নিখোঁজ রয়েছে। ফিরে আসাদের মধ্যে শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে ৩টারদিকে হ্নীলা পশ্চিম পানখালী পাহাড়ের পাদদেশে শসা ক্ষেত পাহারা দেওয়ার সময় একদল স্বশস্ত্র দূবৃর্ত্ত মৃত উলা মিয়ার পুত্র নজির আহমদ (৫৫) এবং নজির আহমদের পুত্র মোঃ হোছন (২৫) কে অপহরণ করে নিয়ে মরিচ্যাঘোনা পাহাড়ের দিকে চলে যায়।

এদিকে একই সময়ে আরো একটি স্বশস্ত্র দূবৃর্ত্ত চক্র মরিচ্যাঘোনার পশ্চিমে পাহাড়ে ধান চাষ পাহারা দেওয়ার সময় স্থানীয় আবুল মঞ্জুরের পুত্র মোঃ শাহজাহান (৩৫), ঠান্ডা মিয়ার পুত্র আবু বক্কর (৪০) এবং আবু বক্করের পুত্র মেহেদী হাসান (১২) কে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। ভোরে সূর্য উঠার আগে স্বশস্ত্র দুপক্ষ মুখোমুখী হলে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ধরতে এসেছে সন্দেহ করে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। তখন আবু বক্কর ছাড়া পেয়ে পালাতে সক্ষম হলেও শাহজাহান দূবৃর্ত্ত দলের সামনে এবং মেহেদী হাসান দূবৃর্ত্ত দলের পেছনে বাঁধা অবস্থায় ছিল। মেহেদী হাসানকে রশিসহ ধাক্কা দিলে পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়। প্রতিপক্ষের লোকজন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করলে মরিচ্যাঘোনা হতে পাহাড়ে উঠা দূবৃর্ত্তদল শাহজাহানকে ফেলে পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় সে প্রাণের ভয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের নীচে পড়ে যায়। গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেলে মেহেদী হাসান কোন রকমে শাহজাহানকে মানুষের সহায়তায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আবু বক্কর আইএমও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও শাহজাহানকে হ্নীলা উপস্বাস্থ্য কন্দ্রে হয়ে উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় দ্রæত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা শাহজাহানের শরীর থেকে ৩৬টি বুলেটের অংশ বিশেষ বের করেছে। চোখের এক পাশে একটি বুলেট লেগে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় চক্ষু ডাক্তারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার বশির আহমদ জানান, এসব অপরাধীদের কারণে কৃষি নির্ভর অত্র এলাকার প্রায় ৩শ একর জমি চাষ করতে পারছেনা। যার কারণে অনেকে এখন খাদ্যসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এসব অপরাধ নির্মূল করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
ফিরে আসা মেহেদী হাসান ও শাহজাহান জানান,এই দূবৃর্ত্ত দলে আলী আকবর পাড়া টাইগার ক্লাবের সভাপতি ইসলাম মিয়ার পুত্র বাদশা মিয়া প্রকাশ গরু বাদশা ও কম্বনিয়া পাড়ার জকরিয়ার পুত্র সিরাজসহ আরো ৩/৪জনকে সনাক্ত করতে পেরেছে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,গত ১৫/২০দিন আগে সন্ধ্যায় উক্ত এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকার এক ছেলেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখে। তখন কাউকে দেখতে না পেয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে এই ছেলেকে মুক্ত করে দিয়ে প্রধান সড়কে ফিরতে সহায়তা করেছিল। এই চক্রের সদস্যরা প্রায় সময় মানুষ ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের পর ছেড়ে দেয়। হয়তো ঢাকার বন্ধি ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ধান চাষী ও পাহারাদারদের ধরে নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। এই ঘটনার খবর পেয়ে বিকালের দিকে একদল পুলিশ মরিচ্যাঘোনা এলাকা পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে এই ঘটনার আগে রাত সাড়ে ১০টারদিকে ২৫/৩৯জনের স্বশস্ত্র একটি দূবৃর্ত্ত গ্রুপকে হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়া হয়ে পাহাড়ের দিকে যাওয়ার সময় ঈমান হোছন নামে এক প্রবাসীকে হুমকি দিয়ে যায় বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।

এই বিষয়ে হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন,সাম্প্রতিকালে মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন দূবৃর্ত্ত চক্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই চক্রটি দূবৃর্ত্তদের ব্যবহার করে অপহরণ, মুক্তিপণ ও খুন খারাবীর মতো ঘটনা ঘটিয়ে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। আমি এই জাতীয় লোকদের বয়কটের পাশাপাশি শনাক্ত করে আইনের কাঠগড়ায় আনার জন্য পুলিশ, র‌্যাব. বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ এলাকার সচেতন মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। ###