টেকনাফ টুডে ডেস্ক |
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর নাম ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়জুল (২৪)। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখপাড়ার কাঁচা মঞ্জিলের স্বত্বাধিকারী হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, তার কুয়েত প্রবাসী দুই চাচার প্রভাবে পুরো পরিবার আহলে হাদিস বা সালাফি মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। এমনকি পরিবারের সদস্যরা মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ পড়তে শুরু করে।
ফয়জুলদের আসল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউপির কালিয়ারকাপন গ্রামে। ফয়জুল নগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের দ্বিতীয়তলার মঈন কম্পিউটারে কর্মরত ছিল। তার বাবা শহরতলির টুকেরবাজার এলাকার শাহ খুররুম মখলিছিয়া হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক। ফয়জুল নিজেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিলেও কোন মাদ্রাসায় পড়ত তা কাউকে বলেনি। মাঝে মাঝে ফয়জুলকে ফেরি করে কাপড় বেচতেও দেখা গেছে। বছরখানেক আগে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পকেটমারতে গিয়ে ধরা পড়েছিল ফয়জুল। তখন স্থানীয়রা তার ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছিল তার বাবাকে। এলাকা ছেড়ে চলে যেতেও বলা হয়েছিল। এর পর থেকে তাকে আর তেমন একটা দেখা যায়নি। পাঁচ-ছয় বছর আগে ফয়জুলের মামা ও বাবা পৃথক জায়গা কিনে বাসা করেন। এর পর থেকেই তারা এখানে আছে।
ফয়জুলের পরিবারের সদস্যদের চলাফেরা ‘রহস্যজনক’। তারা কারও সঙ্গে মিশত না। বাসা থেকেও খুব একটা বের হতো না। শুধু মসজিদে নামাজে যাওয়ার জন্য বের হয়। সবাই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। বড়ভাই হাফিজ হাসান আগে নগরীর পাঠানটুলা জামেয়ায় পড়ালেখা করত।
ফয়জুলের শেখপাড়ার বাসা গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বাসার গেট খোলা আছে। জানা যায়, গ্রামের বাড়ির মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের তোপের মুখে পড়েছিল ফয়জুল। একপর্যায়ে তাকে ও তার চাচাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়। হামলাকারীর দুই চাচা আবদুল জাহার ও আবদুল সাদিক ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে বসবাস করছেন। তার ভাই আবুল হাসান ছয় মাস আগে কুয়েত যান। স্থানীয়রা জানান, দুই চাচা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তার পর থেকেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উগ্র ভাব দেখা দেয়।
রোববার সকালে সিলেট শহরতলির শেখপাড়া ও তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসএসসি পাস করার পর ফয়জুল হাসান পড়ালেখা বাদ দিয়ে সিলেটের একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ শুরু করে। মাঝে মাঝে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করত। শুধু ফয়জুল নয়, পুরো পরিবারের চলাফেরাই ‘রহস্যজনক’।
শেখপাড়ার ব্যবসায়ী রুবেল আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমরা টিভিতে হামলার খবর দেখছিলাম। তখন কেউ একজন হামলাকারীর ছবি দেখে পরিচিত বলে জানান। তখনই ফয়জুলের ভাই হাফিজ হাসান গেঞ্জি গায়ে বের হয়ে স্থানীয় জুবের নামের একজনকে জিজ্ঞেস করেন সিএনজি পাওয়া যাবে কিনা? জুবের জানায়, বাসস্ট্যান্ডে পাওয়া যাবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জুবের দেখেন হঠাৎ সিএনজিতে করে তারা সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে হাসান জানান, তার মা অসুস্থ তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন।’
পাশেই তাদের মামার বাসা। র্যাব-পুলিশের একটি দল রাতেই তার মামা ফয়জুর রহমানকে ধরে নিয়ে গেছে। ৬ নম্বর টুকেরবাজার ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গিয়াস উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ‘শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় র্যাব-পুলিশের একটি দল এসে তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে। ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি সিডি ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে গেছেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘ফয়জুলসহ পরিবারের সবার চলাফেরাই রহস্যজনক। তারা এলাকার কারও সঙ্গে মেশে না। শুধু নামাজের সময় মসজিদে যায়।’
ফয়জুলের কর্মস্থল নগরীর জিন্দাবাজার রাজা ম্যানশনের দ্বিতীয়তলার মঈন কম্পিউটারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুল বলেন, ‘ফয়জুলকে প্রায়ই নামাজে দেখা যেত। ভাবতাম-নামাজি ছেলে খুব ভালো হবে। এখন তো দেখি বড় জাহিল।’ তিনি জানান, ‘সে দেখতে একদম সাদাসিধে। মনে হতো যেন কিছুই বোঝে না বা জানে না।’
এদিকে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কলিয়ারকাপন গ্রামের মানুষ। রোববার বেলা ১১টায় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ কর্মসূচি পালিত হয়।