টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য খালে ; চাষাবাদ ব্যাহত ও হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

জসিম উদ্দিন টিপু : টেকনাফে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত দ্রব্যে ৭/৮টি খাল দূষিত হয়ে উঠছে। এসব দূষিত পদার্থের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। এছাড়া দূষিত দ্রব্যে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট,খালসমুহ ভরাট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় সচেতনমহল ও পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা টেকসই প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক খালসমূহ রক্ষার আহবান জানিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,টেকনাফ উপজেলায় ৮টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১লক্ষ ৭৪হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের বসবাস। এসব ক্যাম্পের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জাদিমোরা উমরখাল,বৃটিশ পাড়া খাল, মোছনী খাল, ছ্যুরিখাল, লেদা খাল, আলীখালী খাল, ঊনছিপ্রাং খাল, চাকমারকূল পালংখালী খাল ও বাহারছড়া শামলাপুর মনখালী খাল সমুহ দিয়ে সেবা দানকারী সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত বর্জ্য প্রতিমাসে এসব খালসমুহে ফেলছে। এসব বর্জ্যরে কারণে অনেক খালের গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় পুকুর-ডোবার মতো হয়ে যাওয়া খালে অনেক রোহিঙ্গা শিশু গোসল করে রোগাক্রান্তও হচ্ছে। এসব খাল দিয়ে পানি চলাচল না থাকায় প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। তাই বদ্ধ অবস্থায় এসব বর্জ্যের ডোবায় বিভিন্ন জীবানু বহরকারী পোঁকামাকড়ের জন্ম হচ্ছে। যা স্থানীয় জনসাধারণের নিকট দূর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

রোহিঙ্গা কর্তৃক যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ,দুপাশ দখল এবং নানাভাবে খাল সমূহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরবর্তী মৌসুমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট এলাকা সমুহ তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রæত সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাল সমূহকে রক্ষা করতে হবে। ক্যাম্পের জন্য গৃহীত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারী রাখতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গার বর্জ্যে দূষিত এবং ভরাট হয়ে যাওয়া খান পুনঃখননের দাবী উঠছে।

রইক্ষ্যংয়ের কৃষক নুরুল আলম বলেন,রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত খালের মধ্যে বর্জ্য নিক্ষেপ করছেন। ফলে খালের পানি যেমন দূষিত হচ্ছে। তেমনি খাল দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি খালে রোহিঙ্গার বর্জ্য ফেলা বন্ধের দাবী জানিয়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খান খনন কর্মসূচী বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

আলীখালীর ছৈয়দ আহমদ সর্দার জানান,খালের পানি দিয়ে শুস্ক মৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদ করত। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে তাদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হওয়ায় এখন চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভবসিন্ধু রায় বলেন,রোহিঙ্গার কারণে টেকনাফে প্রায় ৫শ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসেনি। ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট এলাকা সমূহ এক সময় কৃষি এবং কৃষকের দখলে ছিল। রোহিঙ্গাদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে খালের পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা বলেন,স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে পরিবেশ রক্ষায় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ এবং রোহিঙ্গাদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের আন্তরিকপূর্ণ সহযোগিতার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন,বিষয়টি আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ দিলে তিনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ##