হুমায়ূন রশিদ / জসিম উদ্দিন টিপু / মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম / সাদ্দাম হোসাইন / ফরিদুল আলম : সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১টি পৌর এলাকায় বেদখল ও বাঁধাগ্রস্থ হয়ে পড়া পাহাড়ি ছড়া এবং জোয়ার-ভাটা বিদ্যমান খালসমুহ জবরদখল হয়ে পড়ায় বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব ছড়া ও খাল সংস্কার বা খনন না করায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শংকা রয়েছে। তাই জবরদখল হয়ে যাওয়া পাহাড়ি ছড়া ও খালসমুহ জবর দখলমুক্ত করে সংস্কার করলে পুরো এলাকার ২হাজার ২শ ৫ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতাভূক্ত আনায় দাবী উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩৮৮.৬৮ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের টেকনাফে আবাদযোগ্য ১৩৭২৮হেক্টর জমির মধ্যে ১১৪৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে আসছে। ৩৬টি গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচ পাম্প এবং ২৪০ টি পাম্প মেশিনসহ বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদ করে আসছে। ইতিমধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী খাল, ঘিলাতলী খাল, উলুবনিয়া খাল, লাতুরীখোলা খাল, লম্বাঘোনা খাল, লম্বাবিল খাল, রইক্ষ্যং খাল, কানজরপাড়া খাল, ঝিমংখালী খাল, সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, পূর্ব সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, নয়াবাজার চাঙ্গিরী খাল, কম্বনিয়া খাল এবং পাহাড়ি কেরুনতলী ছড়া,মিজ্জির ছড়া, আমতলী ঘোনার ছড়া, লম্বাবিল ছড়া, শুকনা আমতলী ছড়া, ছোট মুখের ঢালার ছড়া, জোয়ারী খোলা ছড়া, কাঁটাখালী চাকমাপাড়া ছড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের রোজারঘোনা খাল, নাইক্যংখালী খাল, ওয়াব্রাং খাল, পানখালী খাল, উলুচামরী খাল, রঙ্গিখালী খাল, আলীখালী খাল, ছ্যুরিখাল, জাইল্যাঘাটা খাল, ওমর খাল, দমদমিয়া খাল, চেকপোষ্ট খাল, ১৪নং ব্রীজ সংলগ্ন খাল এবং উলুচামরী হামজার ছড়া,উলুচামরী পানির ছড়া, কেয়ারী ঘাট ছড়া, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হেচ্ছার খাল, হাবিরছড়া খাল, নেটং খাল এবং রাজারছড়া, মিঠাপানির ছড়া, বরইতলী ছড়া, নাইট্যং পাড়া ছড়া, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ বড় খাল, ১নং ও ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম খাল, সাবরাং খাল এবং আলীর ডেইল ছড়া,বাহারছড়ার মনখালী খাল, শিলখালী খাল, জাহাজপুরা বড় খাল, হাজম পাড়া খাল,শীলখালী ও বড়শীল খালী খাল, তারের ছড়া খাল, কাদুরার ছড়া খাল, রাইল্যা ছরা খাল, মরিচ্যা ছরা খাল এবং রকিম্মার ছড়া, বালাইর ছড়া, পুরানপাড়া ছড়া, বাঘঘোনা ছড়া, ডাকছড়া, মাথাভঙ্গা ছড়া, বাইন্যাপাড়া ছড়া, জাহাজপুরা ছড়া, টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুক খালী খাল, গোদারবিল খাল এবং নাইট্যংপাড়া ছড়াসহ মোট ৪৫টি খাল এবং ২৫টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলায় বিদ্যমান খাল ও পাহাড়ি ছড়াসমুহ উদ্ধার, প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার প্রভাবশালী, জনপ্রতিপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা জবরদখলে নেওয়া এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় পুরো এলাকাকে চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলি মাটিতে খাল ভরাট হয়ে গেলেও খননের উদ্যোগ না থাকায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে তা ক্রমান্বয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র খাল ও পাহাড়ি ছড়া দখল করে স্থাপনা গড়ে উঠায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বেশীর ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বেদখল হয়ে যাওয়া খাল এবং মরে যাওয়া পাহাড়ি ছড়া সমুহ সংস্কার হলে আরো বিশাল জায়গা চাষাবাদের আওতায় আসবে। ফলে খাদ্য শস্যের সরবরাহ বাড়বে। অনেকে এসব ছড়ায় চাষাবাদের পাশাপাশি মৌসুমী মৎস্য চাষও করতে পারেন।
এই বিষয়ে হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান,খাল সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এলাকা ভিত্তিক চাষাবাদ বাড়াতে এসব খাল ও ছড়া উদ্ধার করে সংস্কারের বিকল্প নেই। মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে মৃত এসব খাল ও পাহাড়ি ছড়াকে জীবন দানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে খাল ও পাহাড়ি ছড়াসমুহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় নিয়মিত মৌসুমী চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। তা নিয়মিত সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসমুহকে দাবী জানিয়ে আসছি। এছাড়া পাহাড়ের ভেতরে বাহাতি ছড়া নামে একটি বড় ধরনের পানির আধার রয়েছে। তা সংস্কার করে মুখ পরিবর্তন করে দিলে হাজার হাজার একর চাষাবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে খাবার পানির সংকট দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন জানান,বাহারছড়ায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে এরকম বেশ কয়েকটি খাল রয়েছে। মেরিন ড্রাইভ হওয়ার পর কিছু খালের মুখ বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে মাথা ভাঙ্গার ফজল মার্কেটের উত্তর পাশ হয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি খালটি বন্ধ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তা সংস্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু কিছু ছোট ছড়ায় পানি চলাচলের সুবিধার্থে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং কৃষি উন্নয়নে ভরে যাওয়া ছড়াগুলো সংস্কার করা গেলে এলাকাবাসী পানি বন্দী থেকে মুক্তি পাবে,ক্ষেতে পানি সেচের সুবিধা হবে।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ডঃ ভবসিন্ধু রায় জানান, অত্র উপজেলার জবরদখল ও ভরাট হওয়া খাল এবং পাহাড়ি ছড়া সমুহ উদ্ধার করে সংস্কারের পর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হলে বিশাল জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়বে। বিষয়টি আশাকরি সরকারের উর্ধ্বতন মহল গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান,জনস্বার্থে বেদখল হয়ে খাল ও পাহাড়ি ছড়াসমুহ উদ্ধার করা হবে। এসব খাল ও ছড়া সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন মহলকে জরুরী ভিত্তিতে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ###