হাওর ও নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠার ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে রোববার সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল।
শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এদিকে শনিবার হাওরের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তারা পানিতে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতির বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।
বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে আনবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদলটি সুনামগঞ্জ যাবে।
ডিসি জানান, আনবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদলটি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর ঘুরে পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এতে তেজস্ক্রিয়তার (ইউরেনিয়াম) উপস্থিতি আছে কিনা তা দেখবেন।
এদিকে হাওরের পানি পরীক্ষার পর ঢাবির উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজমল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘পানিতে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতির বিষয়টি প্রপাগান্ডা হতে পারে। এটার কোনো ভিত্তি আমরা এখানে পাইনি। ইউরেনিয়াম এখানকার পানিতে কোন সোর্স থেকে এসেছে বা আসবে সেটা আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ।’
তিনি বলেন, ধানক্ষেতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশকের প্রতিক্রিয়ায় হাওরের পানিতে এমোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাবির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান।
শনিবার দিনভর হাওর পরিদর্শন শেষে রাতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরকে টার্গেট করেই মূলত আমরা এখানে এসেছি। টাঙ্গুয়ার পরিদর্শন করে আমাদের কাছে বেশ ভালোই মনে হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরকে এতটা দুষিত মনে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কতগুলো প্যারামিটার ওখানে থেকেই মেপেছি। এখানকার পানির নমুনা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি। যেটা আমারা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করব। এটাতে আর কোনো পদার্থ আছে কিনা দেখব।’
ড. মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘অন্যান্য হাওরে যে মাছ এবং হাঁস মারা গেছে তা অক্সিজেন সংকটের কারণেই হয়েছে বলে আমরা মনে করি। হাজার হাজার হেক্টর ধান পানির নীচে গলে-পঁচে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানিতে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে পারে একমাত্র বাংলাদেশ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
হাওর ও নদীতে ভেসে ওঠা মরা মাছ ক্ষতিকর
এদিকে সুনামগঞ্জের হাওর ও নদীতে ভেসে ওঠা মরা মাছ দেশের বিভিন্ন শহরে চালান হচ্ছে। এসব মাছ জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর হওয়ায় না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, ফসল পঁচে গিয়ে পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যে সব মাছ ভেসে ওঠছে সেগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, হাওরের দূষিত পানি ব্যবহার থেকেও জনসাধারণকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ছাড়াও মানবশরীরে বিষক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর হাওরগুলোতে মাছ মরে ভেসে ওঠতে শুরু করে। পরে কোনো কোনো হাওরে হাঁস মরারও খবর পাওয়া যায়।