ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৭ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক |
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ (ফিদেল কাস্ত্রো) আর নেই।

স্থানীয় সময় শুক্রবার কিউবার রাজধানী হাভানায় ৯০ বছর বয়সে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এ আইকন মারা যান বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক ঘোষণায় জানানো হয়।

কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

এরপর ৩০ বছর কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি।

মূলতঃ ২০০৬ সালে অন্ত্রাশয়ে রক্তক্ষরণের ঘটনায় জরুরি অস্ত্রোপচারের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান ফিদেল কাস্ত্রো।

নিজের ৯০তম জন্মদিনে চলতি বছরের আগস্টে সর্বশেষ জনসম্মুখে এসেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। হাভানার কার্ল মার্কস থিয়েটারে জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

তবে এই বিপ্লবীর কণ্ঠে মানুষ সর্বশেষ ভাষণ শুনেছেন চলতি বছরের এপ্রিলে, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে।

তারও আগস্টে জানুয়ারিতে রাজধানী হাভানায় একটি আর্ট স্টুডিওর উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেখা যায়।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন কাস্ত্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বলা হয়েছিল, বিপ্লবী ফিদেল আধ্যাত্মিকভাব সচেতন এবং শারীরিকভাবে অত্যন্ত সবল আছেন।

সর্বশেষ গত গ্রীষ্মে ফিদেলের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাক্ষাৎ করেন।

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রবাদ প্রতীম মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার হলগোইন প্রদেশর বিরানে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দু’বার বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মির্তা দিয়াজ বালার্তের সঙ্গে ১৯৫৫ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই দম্পতির একটি সন্তান ছিল।

পরে তিনি ডালিয়া সোটো ডেল ভেলেকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির পাঁচ সন্তান রয়েছে।

ফিদেল হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সময় রাজনীতিতে যোগ দেন। শুরুতে কিউবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফালজেন্সিও বাতিস্তা এবং কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে কলাম লিখতেন তিনি।

ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে দ্রুতই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন ফিদেল কাস্ত্রো। পরে বাতিস্তা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন তিনি।

এর অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে আক্রমণ চালাতে গিয়ে ধরা পড়েন ফিদেল। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মেক্সিকোতে চলে যান। সেখান থেকে বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য বিখ্যাত ‘২৬ জুলাই আন্দোলন’ খ্যাত সংগ্রাম সংগঠিত করেন।

মেক্সিকোতে অবস্থানকালে ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে পরিচয় হয় ফিদেল কাস্ত্রোর। দুই নেতার মধ্যে প্রথম সাক্ষাতেই কিউবা সংকট নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হয়।

এরপর চে ২৬ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালের ৫ নভেম্বর বাতিস্তা সরকার উৎখাতে ফিদেলের নেতৃত্বে মেক্সিকো থেকে অভিযান শুরু হয়। তারা কিউবা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাতিস্তার সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। এতে ফিদেলের ৮২ জন সহযোদ্ধা মারা যান এবং মাত্র ২২ জন প্রাণে বাঁচেন।

পরে তারা সিয়েরা মস্ত্রা পর্বতমালায় আশ্রয় নিয়ে পুনর্গঠিত হন। এরপর স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে গেরিলাদের নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে বিপ্লব সম্পন্ন করতে সক্ষম হন ফিদেল কাস্ত্রো।

বিপ্লবের পর কিউবার সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৬৫ সালে কাস্ত্রো কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নেতৃত্বে আসীন হন।

এরপর কিউবাকে সমজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রিপরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি কিউবার সর্বোচ্চ সামরিক পদ কমানডান্টে এন জেফে (কমান্ডার ইন চিফ) পদেও আসীন ছিলেন।

অসুস্থতা ও বয়সের কারণে প্রবীণ ফিদেল ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাই ‌ও কিউবান বিপ্লবের অন্যতম নায়ক রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর ফিদেল ধারাবাহিকভাবে অতীত ও বর্তমানের বিভন্ন ঘটনার বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ লেখায় ফিদেল লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করার পরিকল্পনা থেকে সরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে ‘বৈশ্বিক বিপর্যয়’ এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।