শীতে কাতারচ্ছে শিশুরা
রফিক মাহমুদ, উখিয়া ॥
মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ও টেকনাফ লেদা আন রেজি: ক্যাম্পে চলে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুরা প্রচন্ড শীতে কাতারাচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস ও যত্রতত্র মলমুত্র ত্যাগ করার কারণে সর্বত্র পরিবেশ দুষিত হওয়ার পাশা-পাশি রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও প্রকট খাদ্য সংকটের কারণে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অনাহারে অর্ধহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার বালুখালীতে নতুন করে গড়ে উঠা রোহিঙ্গাদের বস্তি এলাকা সরজমিনে পরিদর্শনে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের আইনশৃংখলা বাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২ মাস ধরে ৩৫ হাজারেও অধিক রোহিঙ্গা নাগরিক নাফ নদী ও ঘুমধুমের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। দলে দলে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়া উপজেলার কুতুপালং সহ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশে বনভূমির পাহাড়ী এলাকায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা নতুন করে বস্তিগড়ে তুলেছে। গত ৩দিন ধরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ ও উখিয়া বনবিভাগের উদ্যোগে প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব রোহিঙ্গাবসতি ও ঝুঁপড়ি ঘর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রায় ২ শতের মত বসতি।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া নতুন রোহিঙ্গারা বালুখালী এলাকায় নতুন করে বনভূমির জায়গায় বস্তি গড়ে তুলে। খবর পেয়ে শত শত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার জন্য নতুন গড়ে উঠা উক্ত বস্তিতে চলে আসতে শুরু করেছে। মংডু কাজীর বিল এলাকার খলিল আহমদ (৫০) জানান, স্থানীয় গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় কোন রকম আমরা আশ্রয় ফেলেও প্রচন্ড শীতে কাতারাচ্ছে সবাই। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা এক দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান। একই দেশের জামবুনিয়া গ্রামের জহির আহমদ (৪৫) ও শমশের আলী (৪০) বলেন, গত ৩ দিন ধরে এক বেলা ভাত কারো কপালে জুটেনি। শিশুরা খাবার না পেয়ে হাঁহাঁকার করছে এবং শীতের ভরা মৌসুমে ঠান্ডায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গারা নতুন করে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নতুন বস্তি গড়ে তুলেছে। উক্ত বস্তিতে কমপক্ষে ৩ হাজারেও অধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুরা রয়েছে। তবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় সর্বত্র দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ইতি মধ্যে। ত্রাণ সামগ্রী বা খাদ্য সংকটের কারণে নতুন রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাবেক মেম্বার গফুর উল্লাহ জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারাদেরকে নিয়ন্ত্রন ও আইনশৃংখলা রক্ষায় কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
মেহের নেছা (৫৫) ও এলেমা খাতুন (৫০) বলেন, গত ১১ দিন আগে সীমান্ত দিয়ে প্রথমে কুতুপালংয়ে আসি। সেখানে আমাদেরকে বিতাড়িত করলে আমরা বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের মত শত শত রোহিঙ্গারা রয়েছে। প্রচন্ড শীতে ও খাদ্যের অভাবে সীমাহীন কষ্টে জীবনযাপন করছি।
এদিকে ৭ জানুয়ারী সকালে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাঈন উদ্দিন, উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম ও উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।