সম্প্রতি খোদ রাজধানীতেই ইয়াবা তৈরির কারখানা স্থাপনে তৎপর একটি চক্র। জানা গেছে, চক্রটি সোডিয়াম বেনজোয়েট, ক্যাফেইন ও ভেনিলা পাউডারের সঙ্গে গোলাপি রঙের কেমিক্যাল মিশিয়ে ঘণ্টায় ৫০ হাজার ইয়াবা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে কারখানা স্থাপন শেষে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিষয়টি কেউ যাতে টের না পায়, সেজন্য কারখানায় বসানো হয় ‘সাউন্ড প্র“ফ’ মেশিন। কিন্তু বিধি বাম। গোয়েন্দারা বিষয়টি টের পেয়ে যাওয়ায় চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিক চক্র রাজধানীতে ইয়াবা তৈরির কারখানা স্থাপনের চেষ্টা করেছে, তবে সফল হয়নি। কারখানা স্থাপনের আগেই তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ অন্যরকম। দুর্বৃত্তরা কারখানা স্থাপনসহ বাদবাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অপেক্ষায় ছিল। ঠিক এ রকম একটা সময়ে গোয়েন্দারা তাদের আটক করতে পেরেছেন, এটি স্বস্তিদায়ক। তবে বাইরে থেকে দেশে প্রতিনিয়ত ইয়াবার চালান আসছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পুলিশের কাছে পাচারের সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা থাকলেও অধিকাংশই সরকারদলীয় লোক হওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন তাদের গ্রেফতারে আন্তরিক নয়। মাদক পাচার ও এর ব্যবহার রোধে আইনরক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ ইয়াবা পাচার রোধের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ইয়াবা আসক্তিতে অধঃপতিত হচ্ছে দেশের তরুণ সমাজ। অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। ইয়াবার সর্বনাশা ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাজে অবক্ষয় আরও বাড়বে। বর্তমানে দেশে নেশার উপকরণ হিসেবে ইয়াবাসহ কমপক্ষে ৩২ ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদক অপরাধের মামলার সংখ্যা কয়েক হাজার হলেও উপযুক্ত সাক্ষী, তদন্ত কাজে কর্মকর্তার গাফিলতিসহ নানা কারণে এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। তবে শুধু আইন করে মাদকের ব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। শৈশবেই সবার মধ্যে নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা দরকার। মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল তার পরিবার। মাদকমুক্ত জাতি গঠন করতে হলে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে সন্তান ও শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনের দিকে যাচ্ছে কিনা। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকাও জরুরি। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া মাদক ব্যবসা নির্মূল করা সম্ভব নয়। ইয়াবা পাচার ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্তরা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া চলবে না।
মাদক নির্মূলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকা জরুরি
