বান্দরবানে ঈদে প্রস্তুত পর্যটন কেন্দ্র

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৩ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : সাঙ্গুতীরের শহর বান্দরবানে যেন মুগ্ধতার শেষ নেই। দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড়ের মাঝে একদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আঁকা-বাঁকা পথ আর ১১টি নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন, অন্যদিকে আছে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের মিতালি।

প্রকৃতির এমন নির্মল স্বাদ পেতে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় এলাকা হয়ে ওঠে বান্দরবান। তাই স্বচ্ছন্দে ঘোরার জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়েই আসেন পর্যটকরা। তবে এবার নানা কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী বুকিং হয়নি বলে জানান সংশ্ষ্টিরা।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা শহরে তাদের নিবন্ধিত ৬৪টি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কোরবানির ঈদ ঘিরে শনিবার পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং ৩৫ শতাংশের কম।

সিরাজুল বলেন, “পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য ফোটে বর্ষায়। বান্দরবানে এসে একসঙ্গে বর্ষা, মেঘ ও সবুজ প্রকৃতির দেখা যারা একবার পেয়েছেন তারা এ সময় বারবার ছুটে আসেন। এবারও তারাই মনে হয় অধিকাংশ অগ্রিম বুকিং করেছেন।”

শহরের আশপাশে কয়েকটি পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাচল, মেঘলা ও শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রগুলো এবার নতুন করে সাজানো হয়নি। সাধারণত ঈদের আগে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দেয়ালে দেয়ালে নতুন রঙ লাগিয়ে সাজিয়ে তুলত স্থানীয় প্রশাসন। এবার বর্ষাকাল হওয়ায় তা করা হয়নি।

তবে এসব পর্যটনকেন্দ্র বরাবরের মত গোছানো দেখা গেছে। পর্যটকদের হাঁটাচলার পথ, জায়গায় জায়গায় বসার স্থান ও সেলফি তোলার জন্য বিভিন্ন ‘ভিউ পয়েন্ট’ বেশ পরিষ্কার। গুছিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন পরিষ্কার করা হচ্ছে।

বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রের টিকেট বিক্রেতা আদীপ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটককমকে বলেন, “ঈদের কয়েক দিন থেকে আগে কোনো পর্যটকের আনাগোনা নেই। বিকালের দিকে কিছু স্থানীয় লোকজন ঘুরতে আসে। হয়তো সবাই ছুটি শুরু হলে ঘুরতে আসার প্রস্ততি নিচ্ছে।”

প্রতিবছর ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে শহরের তিন কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এর ঝুলন্ত সেতু। কয়েক দিন বৃষ্টি না থাকায় লেকের পানি বেশ স্বচ্ছ। সেখানে বড় ও ঘন গাছগাছালি থাকায় গোটা মেঘলা এলাকাজুড়ে এখন ছায়াঢাকা পরিবেশ। লেকের পানিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট। আর পাহাড়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার জন্য রয়েছে কেবল কার।

মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের টিকেট বিক্রেতা সুকুমার তঞ্চঙ্গ্যা শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পর্যটক বরণ করে নিতে ঈদের প্রস্ততি হিসেবে মেঘলা পর্যটক কেন্দ্র পরিষ্কার ও গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। মেঘলায় যারা বেড়াতে আসবে তারাও বেশ উপভোগ করতে পারবে।

শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে বমপাড়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরণা শৈলপ্রপাত। বর্ষায় ছলছল শব্দে এখন শৈলপ্রপাত মুখরিত। বিনা টিকেটে ঝর্ণায় নেমে মেতে উঠতে পারে যে কেউ। এতে ক্লান্ত শরীর তাজা হয়ে উঠবে।

এছাড়া বান্দরবান শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাকুমে (নাইত্ অইং) ঘুরে আসতে পারবেন পর্যটকরা। গিরিখাদে থাকা এ কুমে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে ৪০ থেকে ৫০টির বাঁশের ভেলা। তবে একটি ভেলায় দুইজনের বেশি ওঠা যায় না। দেবতাকুমে নিরাপদে ঘুরে বেড়ানোর জন্য লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক

বান্দরবান জোনের পর্যটন পুলিশের সুপার আব্দুল হালিম বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সকল সদস্যের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। তার পরও পুলিশ সব সময় তৎপর থাকবে।

শুধু জেলা শহর, নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও থানচিতে পর্যটন পুলিশ থাকছে বলে তিনি জানান।

সুত্র : বিডি নিউজ ২৪ ডটকম।