করোনার ভারে ধুকে মরছে বেকার যুবক শ্রেণি

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৬ years ago

মোঃ রফিকুজ্জামান : যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর যা কিছু বড় বড় অর্জন তার সিংহভাগই যুবক বা যুব শ্রেণির হাত ধরে । যেখানে ভালো কিছু অর্জন হয়েছে সেখানে কোনো কোনো ভাবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এই যুব সমাজ । তাই তো জাতীয় কবি নজরুল তাদের বন্দনা করতে ভুলেননি। কবির কথায়– “বর্বর বলে যাদের গালি পড়িল ক্ষুদ্রমনা কূপমন্ডুপ অসংযমী আখ্যা দিয়েছে যারে তার তরে ভাই গান রচে যায় বন্দনা করি তারে” এছাড়া ইসলাম ধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মেও যুবকদের বিশেষ মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু এখানে আমি ভিন্ন প্রসঙ্গে অবতারণা করার প্রয়াস চালিয়েছি , আজকের আলোচিত যুবক শ্রেণি বলতে সেই সব কর্মক্ষম যুবদের কথা যাদের কর্ম করার সামর্থ্য থাকার পরেও পড়াশোনায় শিক্ষা-দিক্ষায় একজন যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত হওয়া যুবক। যাদের চাকরি দেয়ার প্রলোভনে রক্ত শোষণ করে নিচ্ছে পিএসসি ও এনটিআরসি সহ হরেক রকম চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠান । এমনিতেই এই দেশের শিক্ষিত সমাজের এক চতুর্থাংশ এই বেকার যুবকের দলে , যাদের সংখ্যা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে সবাইকে চিন্তা করা উচিত কি করে সমাধান করা যাবে এই সমস্যা। তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান দেশের চিত্র যদি বলি দেখা যায় যে ,দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হতে পারে, ব্যাংক লুট হতে পারে, দুর্নীতি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে, ক্যাসিনো,কালোবাজারি , মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি , টেন্ডারবাজি করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারে মাগার বিনা খরচে চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারে না নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা এই শিক্ষিত বেকার যুবকের দল। চাকরির পেছনে বলি দিতে হয়ে কত জনের কত স্বপ্ন। খরচ করতে হয় পড়াশোনা ফাঁকে কষ্ট করে অর্জিত দুই পয়সা বা মাসের পর মাস বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিউশন করে কামায় করা টাকা গুলো , আবার অনেকের সেই সাথে বিসর্জন দিতে হয় ছোট ছোট ভাই বোনের বা বৃদ্ধ বাবা মা এর প্রতিক্ষিত স্বপ্ন গুলো। এই হলো সভ্য সমাজের নোংরা বৈষম্য, এই বড় কষ্টের।

করোনা ভাইরাস পরো পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে নিজের মতো করে, নিস্তব্ধ করে দিয়েছে জনজীবন । এহেন সংকটময় অবস্থা যেন বেকার যুবকদের মরার উপর খাড়ার ঘা । পার্ট টাইম চাকরি করে, টিউশন করে বা পত্রিকা বিক্রি করে হলেও যাদের দু পয়সা রোজগার হতো তাও যেন রুদ্ধ করছে এই মহামারী করোনার কালো থাবা। এই সামান্য টাকায় যারা লুকিয়ে রাখতো হাজারো রঙিন স্বপ্ন তারাই এখন ঘোর অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে। প্রতি নিশ্বাসে নিশ্বাসে ভার করছে নাভিশ্বাসের যন্ত্রণা, যাবে কোথায় খাবে কি? এখন তাদের কলম আছে খাতা নেই, পেট আছে খিদেও আছে কিন্তু খাবার নেই কারণ জামায় পটে আছে কিন্তু কড়ি নেই এই হলো বেকার যুবকের করুন দশা। বেকার যুবক শ্রেণি সমস্যা সমাধানে সরকার ও সচ্ছল সুন্দর মনের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে হবে , কারণ তাদের স্বপ্ন বেঁচে থাকলে আপনার স্বপ্নও সুন্দর থাকবে। অন্যথায় দেশের বা জাতির বিজয়ের মূল শক্তি যুবশ্রেণি অবহেলায় অযত্নে হারিয়ে যাবে।

* শিক্ষিত বেকার যুবক শ্রেণির পক্ষে কিছু প্রস্তাবনা—
1. করোনায় আপদকালীন সময় আর্থিক সহায়তা প্রদান।
2. চাকরির পরীক্ষায় বিনা খরচে অংশগ্রহণ করার সুযোগ প্রদান।
3.পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র তৈরি করা।
4. জেলা বা উপজেলা ভিত্তিক পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা।
5. বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া।
6. বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা।
সর্বশেষ মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি হে আল্লাহ আপনি আপনার রহমতের করুনা দিয়ে করোনার ভয়াবহতা থেকে আমাদের ও আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে রক্ষা করুন আমীন।