মো. আবদুল মজিদ মোল্লা : ইসলাম মানবজাতিকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে এবং বহু সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদের উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)
মানবজাতির সম্মানের নানা দিক : পবিত্র কোরআনে মানুষকে সম্মানিত করার নানা দিক বর্ণিত হয়েছে। যার কয়েকটি হলো—
১. ফেরেশতাদের সিজদা : পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই ফেরেশতাদের সিজদার মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল; সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো। ’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৪)
২. শিক্ষার সহযাত্রায় সভ্যতার বিকাশ : আল্লাহ মানবজাতিকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং শিক্ষার সহযাত্রায় মানবজাতির যাত্রা শুরু হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩১)
তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে নাম দ্বারা মানবজাতির জন্য অপরিহার্য জ্ঞান উদ্দেশ্য।
৩. বাকশক্তি দান : আল্লাহ মানবজাতিকে বাকশক্তি বা ভাষা দানের মাধ্যমে অন্য সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। এ জন্য দর্শনশাস্ত্রে মানুষের পরিচয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সবাক প্রাণী’ বাক্য দ্বারা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের ‘বয়ান’ (ভাব প্রকাশের পদ্ধতি) শিখিয়েছেন। ’ (সুরা : আর-রহমান, আয়াত : ৩-৪)
৪. মানুষের সেবায় সৃষ্টিজগৎ : আল্লাহ সৃষ্টিজগৎ মানুষের অধীন করেছেন, তাঁর সেবায় নিয়োজিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু নিজ অনুগ্রহে। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে আছে নিদর্শন। ’
(সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ১৩)
৫. উত্তম জীবিকা নির্ধারণ : আল্লাহ মানবজাতির জন্য উত্তম জীবিকা নির্ধারণ করেছেন। মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর সব কিছু আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু আছে, তা থেকে তোমরা আহার কোরো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
৬. কিতাব দান : আল্লাহ মানবজাতিকে তাঁর কিতাব দানের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসুলগণকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৫)
৭. পোশাক দান : আল্লাহ শুধু মানবজাতিকে পোশাক দান করেছেন, যার মাধ্যমে সে লজ্জা নিবারণ করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি এবং আল্লাহভীতির পোশাক—এটাই সর্বোত্কৃষ্ট। এটা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)
৮. রোগে আরোগ্য দান : মানুষের রোগের আরোগ্যও দান করেছেন মহান আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা অবিচারকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)
৯. ঘর-বাড়ি দান : আল্লাহ মানুষকে স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসস্থল দান করেছেন। যদিও অন্য প্রাণীর ঘর আছে, তবে মানুষের ঘরই সর্বোত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ঘরকে করেন তোমাদের আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুর চামড়ার তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা তাকে সহজ মনে কোরো ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮০)
১০. ইবাদতের সুযোগ দান : আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে ইবাদতের সুযোগ দান করে তাদের মর্যাদাশীল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)
আল্লাহ প্রদত্ত এই সম্মানের বিপরীতে মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর আনুগত্য করা এবং তাঁর প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকা।
