২১ জুলাই আ’লীগের সদস্য সংগ্রহ ফের শুরু : চলবে জাতীয় সম্মেলনের আগ পর্যন্ত

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৬ years ago

যুগান্তর |

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী ব্যস্ততায় সেই কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের পর এখন দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে দলটি।

এরই অংশ হিসেবে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তৃণমূলে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। ২১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে এই কার্যক্রম চলবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগ পর্যন্ত।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে গঠনতন্ত্র মেনে। আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করে- এমন তরুণ ও মেধাবীদের দলে জায়গা দেয়া হবে। প্রাধান্য দেয়া হবে বিগত নির্বাচনে যারা দলের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন তাদের।

সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। একই সঙ্গে সদস্য নবায়নের সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও সুবিধা নিতে দলে ভেড়াদের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবারও সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি যারা আগে আছেন, তাদের নবায়ন করতে হবে। দলের সভাপতির নির্দেশক্রমে জেলা ও উপজেলা নেতাদের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন বই সংগ্রহ কারার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও কিছুদিন পরেই নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। ওই সময়টাতে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান ছিল অনেকটাই ঢিলেঢালা। ফলে সে কাজ আর শেষ করা যায়নি। বেশকিছু সাংগঠনিক জেলা কেন্দ্র থেকে বই নিয়ে কাজ শুরু করলেও তা শেষ করে জমা দেয়নি।

অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে। এই সময়ের মধ্যেই নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রম শেষ করতে চায় দলটি। দলের সাধারণ সম্পাদকদের নির্দেশনার পর ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে সাংগঠনিক ইউনিটগুলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত যুগান্তরকে বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কাজ আবারও শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও এ কাজ আগেই শুরু হয়েছিল। থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ে বইও দেয়া আছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘এই কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আবার নতুন করে শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫নং অনুচ্ছেদে তিন বছর পরপর একেবারে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে নির্ধারিত ফরমে প্রদত্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ত্রিবার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা প্রদান করে ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী-পুরুষ সদস্য হতে পারবে। তবে উপধারায় কারা সদস্য হতে পারবেন, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী, নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারী বা বাতিলকৃত ব্যক্তি নয়; অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়; ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বা পেশায় বৈষম্যে বিশ্বাস করে না; আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী কোনো সংগঠনের সদস্য নয়- তারা সদস্য হতে পারবেন। এই ধারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকা ও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই নতুন সদস্য সংগ্রহের সময় গঠনতন্ত্র পুরোপুরি মানা হয় না। দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকায় অনেকেই আওয়ামী লীগের সদস্য হতে চান। এই সুযোগে স্থানীয় নেতারা নিজেদের দল ভারি করতে যে কাউকে দলে জায়গা দেন। ফলে সুবিধাবাদী বা অনেক ক্ষেত্রে অন্য দলের সদ্যস বা পদে থেকেও অনেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ পেয়ে যান। এছাড়া সদস্য ফরমও পূরণ করা হয় না সঠিকভাবে।

অন্যদিকে সদস্য নবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক পদধারী নেতা সঠিক সময়ে চাঁদা পরিশোধ করেন না। তবে এবার এই বিষয়গুলো কঠোরভাবে নজরদারি করার কথা বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সম্প্রতি রাজধানীতে নতুন সসদ্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আবার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক নতুন মুখ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা অতীতে আওয়ামী লীগে আসেনি, তারাও এবার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মনে রাখবেন, আবেগ কিন্তু বেশিদিন থাকে না। আবেগের সঙ্গে চেতনা থাকতে হবে।’

যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের দলে নেয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর পরিবার হলে সেখানে আমরা সদস্য সংগ্রহ করি না, তারা সদস্যপদ নিতে পারে না। আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের নীতিমালায় এমনটাই স্পষ্টভাবে বলা আছে। এখানে আমরা অটল।

পারিবারিকভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে, তাদের কেউ যদি আসতে চায়, সেখানে তো আমাদের প্রশ্ন থাকতেই পারে, আমাদের দেখতে হবে। এখানে আমাদের আদর্শ এবং মূল্যবোধের প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্ন। এখানে আমরা আপস করতে পারি না।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতার সুবিধা নিতে এখন অনেকেই হয়তো আসতে চাইছে। কিন্তু তারা সুসময় ফুরোলে থাকবে না। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমারা সদস্য সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিতে চাই। আমরা চাই, আগামী প্রজন্মের তরুণ ও মেধাবীরা আওয়ামী লীগে আসুক।’

গত রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২১ জুলাই থেকে সারা দেশে নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তুর্ভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে। ‘তারুণ্যের শক্তি- বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ নীতির আলোকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শভিত্তিক আগামী প্রজন্ম গঠন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের হাতিয়ার হিসেবে তরুণ সমাজকে উন্নয়নমুখী কল্যাণকর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার জন্যই সাংগঠনিক এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।