১০ বছরে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডে ১৫৯০জন প্রাণ হারিয়েছে

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৬ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : গত দশ বছরে সারা দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যাতে ১ হাজার ৫৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সে ঘটনায় একই পরিবারের ১১ জন ব্যক্তি প্রাণ হারান। নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি পর্যায়ে গঠিত সকল তদন্ত কমিটি এলাকার রাসায়নিক মজুদ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পুরান ঢাকার সকল আবাসিক ভবন থেকে রাসায়নিক দোকান কারখানা গুদাম উচ্ছেদের সুপারিশ করে।’

‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে আরও ৭১ জনের প্রাণহানি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দোষী ব্যক্তির শাস্তির আশ্বাস মিললেও শাস্তি দৃশ্যমান হয়নি এখনো।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অগ্নিঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পুরান ঢাকা শীর্ষক গণশুনানিতে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।

গণশুনানির আয়োজন করে আইন ও শালিস কেন্দ্র, বেলা, ব্লাস্ট, ব্র্যাক, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট, এএলআরডি এবং নিজেরা করি নামক সংগঠন।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘পুরান ঢাকা থেকে ক্ষতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে ৩৫টি ক্ষতিকর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যেন পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় না থাকে সেজন্য টাস্কফোর্সকাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এটাও ভাবতে হবে ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ তাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা আশা করছি পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে খুব শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে পারব।’

মেয়র বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা অসহায় বা যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছেন তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ডিএসসিসিতে আবেদন করলে আমাদের আওতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব তাদের চাকরির ব্যবস্থা আমরা করব।’

বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের নগর ও পরিবেশ সম্পাদক ড. ফরিদা নিলুফা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পুরান ঢাকা সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এসব ভবনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সবাইকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে।’

বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের মতো যখন ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা শর্ট ট্রার্ম, লং ট্রার্ম পরিকল্পনার কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক সব কিছু করে ফেলতে চাই। তিনি বলেন, নিরাপত্তাবিষয়ক জনসচেতনতা আগে তৈরি করতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে সঠিকভাবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একটা জায়গায় আমাদের আসতে হবে।’

গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, ‘নিমতলীর পর চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা প্রমাণ করে যে নিমতলী থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত কমিটিগুলোর কোনো প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি, এমনকি আদালতেও দাখিল করা হয়নি। কমিটিগুলোর সুপারিশ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি ফলে নিরাপদ পল্লী স্থাপনের প্রক্রিয়া অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলম্বিত হয়েছে। কোনোরকম অনুমোদন, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই পুরান ঢাকায় এখন পরিচালিত হচ্ছে হাজার হাজার বিস্ফোরক ও রাসায়নিক গোডাউন ও গুদামঘর।’

তারা বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তা কার্যকরভাবে বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। লোভ ও অব্যবস্থাপনার কাছে জিম্মি রয়েছে পুরান ঢাকার লাখ লাখ বাসিন্দা।’

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অগ্নিঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পুরান ঢাকা শীর্ষক গণশুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, ব্লাস্ট আনারারী নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুস সালামসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা।