কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া : দেশে এইডস রোগির হার সরকারি হিসাবে -০.১% এর কম,কিন্তু এইডস রোগ নিয়ে কক্সবাজারে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে সর্বত্র। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের হিসাবে জেলায় বর্তমানে রোহিঙ্গা এইডস রোগির সংখ্যা ১০৭ জন। এর মধ্যে নতুন আসা রোহিঙ্গার মধ্যে ৯৭ আর পুরাতন রোহিঙ্গা রোগি আছে ১০ জন। সংশ্লিষ্টদের মতে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। একই সাথে এইডস রোগ কক্সবাজারের জন্য ঝুকি হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য এখন থেকে সব মহল থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং সনাক্ত হওয়া রোগিদের সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনে রাখার উপর জোর দেন তারা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি নজরদারীতে রাখার দাবী সচেতন মহলের।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও এআরটি সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী জানান কক্সবাজার বর্তমানে সব মিলিয়ে এইডস রোগি আছে ১৬৩ জন এর মধ্যে ২৫ আগষ্টের পরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগি সনাক্ত হয়েছে ৯৭ জন। তার মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ,নারী ৪৯ জন এবং শিশু এইডস রোগি আছে ১৫ জন। আর গত ২ বছরে কক্সবাজারে এইডস রোগি সনাক্ত করা হয়েছে ৬৬ জন। তার মধ্যেও ১০ জন রোহিঙ্গা,বাকিরা কক্সবাজারের বাসিন্দা তবে এরমধ্যেও বেশির ভাগ মূলত প্রবাসী। সে হিসাবে নতুন পুরাতন রোহিঙ্গা এইডস রোগি ১০৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১ জন। বাকিদের জেলা সদর হাসপাতালের তত্তাবধানে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তিনি বলেন ২০১৫ সাল থেকে কক্সবাজারে এইডস রোগিদের আলাদা পরীক্ষা,কাউন্সিলিং এবং সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হযেছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজার এইডস রোগি ছিল ৬৬ জন,তার মধ্যে ১০ জন পুরাতন রোহিঙ্গা ছাড়া বাকিরা ঢাকা,চট্টগ্রাম থেকে রেফার করা বা স্থানীয় ভাবে সনাক্ত হওয়া এইডস রোগি। স্থানীয়দের মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশ ফেরত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন রোহিঙ্গার কারনে অবশ্যই কক্সবাজারে এইডস এর ঝুকি বাড়ছে এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরো এইডস রোগি সনাক্ত হওয়ার আশংকা আছে। কারন বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে এইডস রোগির হার -০.১% কিন্তু মায়ানমারে সেই হার .৮ %। সে হিসাবে ৮/১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আরো এইড্্স রোগী সনাক্ত হওযার আশংকা আছে।
এ ব্যপারে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রোহিঙ্গা মহিলা এইড্স রোগির (রোজিনা) ছদ্মনাম জানান, তিনি কোন দিন স্বামী ছাড়া কারো সাথে যৌন মিলন করেন নি। বা এমন কোন কাজ করেন নি যে তার এইডস হতে পারে। ২/৩ বছর ধরে তার শরীর খারাপ লাগছে কোন ঔষধে কাজ হয়না। সব সময় দূর্বল লাগে পরে ২৫ আগস্টের পরে মায়ানমার থেকেএখানে পালিয়ে আসলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করে এই রোগ সনাক্ত করে। কথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, বলেন আমার সবচেয়ে খারাপ লাগছে যে নিজের মেয়েরও নাকি এই মরণ রোগ আছে। তার কি দোষ বলতেই সে আর কথা বলার অবস্থায় ছিল না। আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন আমার বয়স ৪০ এর কাছাকাছি কোন দিন এমন কোন কাজ করিনি যে এই রোগ হয়। এখন শুনছি আমার স্বামীর নাকি এই রোগ আছে তার কাছ থেকে আমার শরীরে এসেছে। জানি না কি হয় তবে এখানকার ডাক্তাররা চিকিৎসা করছে।
পরে মোবাইলে উখিয়ায় বসাবাস করা এক এইডস রোগির সাথে কথা বলে জানা গেছে ৪ বছর আগে তার এইডস রোগ ধরা পড়ে। এর আগে সে দুবাইতে ছিল ১১ বছর। পরে সেখানে শরীর খুব খারাপ হলে এখানে চলে আসি তখন পরীক্ষা করে এই্ডস রোগ নিশ্চিত করে ডাক্তাররা। প্রথমে আমি খুব ভয়ে ভয়ে থাকতাম কখন মরে যাব। কিন্তু পরে চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা করি এখন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে নিয়মিত চিকিৎসা করি। মোটামোটি ভালই আছি,তবে সমস্যা হচ্ছে ইদানিং অনেক মানুষ জানে তাই এলাকায় থাকতে পারি না। আর পরিবার ওআমার সাথে ভাল ব্যবহার করে না। তিনিও কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমার মত এই রোগ যেন আর কারো না হয় এখন সেই দোয়াই আল্লাহর কাছে করি সব সময়। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মেজবাহ উদ্দিন আহামদ বলেন মুলত রোহিঙ্গাদের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখে পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এইডস রোগি সনাক্ত করি। পরে অধিকতর চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। তিনি বলেন আমরা রোহিঙ্গাদের পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পেরেছি মুলত মায়ানমারে তাদের চিকিৎসা করানো হতে খুবই দায় সারা ভাবে,একই সিরিঞ্জ বার বার ব্যবহার করা হতো। এবং ছোট খাট অপারেশনের যন্ত্রপাতিও বিভিন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহার করা হতো। এছাড় হয়তো কিছু অসামাজিক কার্যকলাপও হতে পারে। তবে এখন রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় মানুষ ঝুকিতে আছে। সে জন্য সব দিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোন ভাবেই যেন কোন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে বিয়ে করা না হয়। আর তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা এবং সনাক্ত হওয়া এইডস রোগিদের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার মাঝে রাখতে হবে।
কক্সবাজার নিকাহ রেজিস্ট্রার(কাজী) সমিতির সভাপতি মৌলবী ফরিদ আহামদ বলেন আমরা আগে থেকেই বিবাহ নিবন্ধনের ব্যাপরে খুবই সতর্ক থাকতাম। তবুও রোহিঙ্গা আসার পরে আবারও সকল কাজীদের চিঠি দিয়ে কঠিন ভাবে সতর্ক করা হয়েছে কোন ভাবেই যেন রোহিঙ্গা নারী পুরুষদের বিয়ে করানো না হয়। কোন ভাবেই বৈধ কাগজ পত্র ছাড়া বিবাহ নিবন্ধন হচ্ছে না। এছাড়া কাউকে সন্দেহ হলে প্রয়োজনীয় মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নাগরিকত্ব যাচাই করছে কাজীরা।
এদিকে কক্সবাজার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক খাজা নাজিম উদ্দিন বলেন আমরা জেলা সব ঈমাম সাহেবদের আলাদা ভাবে সতর্ক করেছি এবং প্রশিক্ষন দিয়েছি কোন ভাবেই যেন রোহিঙ্গাদের বাসাবাড়িতে বা মসজিদে আশ্রয় পশ্রয় দেওয়া না হয়। আর কোন ভাবেই যেন বিয়ে পড়ানো না হয়। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুস সালাম বলেন সনাক্ত হওয়া রোহিঙ্গাদের অত্যন্ত গোপানীয়তা এবং যন্ত্রের সাথে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, একই সাথে তাদের কাউন্সিলিং এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতাও করাও হচ্ছে।