সাদ্দাম হোসাইন : টেকনাফে রাতে এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সোর্স সন্দেহে পূর্ব শত্রæতার জেরধরে এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারী সিন্ডিকেট, ডাকাত ও স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রæপের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় ঈমান হোছন। এই ঈমান হোছন হত্যাকান্ডের পর মামলা দায়েরের সপ্তাহ পার হলেও প্রকৃত ঘাতকেরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় নিহতের পরিবার-পরিজনের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
থানায় দায়েরকৃত এজাহার সুত্র জানায়,গত ১২এপ্রিল টেকনাফ মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-৩২/২৭১-তারিখ-১২-০৪-২০২১ইং এর আসামীরা হচ্ছে হ্নীলা পশ্চিম লেদা নুরালী পাড়ার আবুল হোছনের পুত্র আব্দুল খালেক (৩০), মোঃ হাশেমের পুত্র মোঃ রাসেল প্রকাশ আব্দুইয়া (২০), মোঃ নুরের পুত্র ছৈয়দ নুর (২০), লেদা মৌলভী পাড়ার কাদের হোছন প্রকাশ বেলা কাদেরের পুত্র মোঃ জুহুর আলম (২৮), লেদা লামার পাড়ার আবুল কালামের পুত্র মোঃ নাসিম (২২), পশ্চিম লেদা নুরালী পাড়ার কবির আহমদের পুত্র মোঃ ইমরান (২৩), কাদের হোছন প্রকাশ বেলা কাদেরের পুত্র নুরুল ইসলাম (৩৮), আবুল হোছনের পুত্র আব্দুর রহমান (৩২), আব্দুল আউয়াল (২২), মকতুল হোছনের পুত্র মোঃ আক্তার হোছন (২৮), ঈমান হোছন (২৪), আলী উল্লাহর পুত্র আবুল হোছন (৫০), রিদুওয়ান প্রকাশ টুনুর পুত্র রবিউল হাসান (২৩), কাদের হোছন প্রকাশ বেলা কাদেরের পুত্র মোঃ নুর (৩৬), আব্দুস শুক্কুর প্রকাশ শুকনুর পুত্র মোঃ ইসলাম প্রকাশ ধইল্যা (২৭), নুর আহমদ প্রকাশ ছুনিক্কার পুত্র মোঃ বোরহান উদ্দিন (২৬) এবং পার্শ্ববর্তী ২৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ আয়াজ প্রকাশ মোঃ শাহ (১৯)সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪/৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এতে অনেক নিরীহ মানুষকে জড়ানোর অভিযোগের ব্যাপারে মামলার বাদী বলেন, প্রকৃত ঘটনায় জড়িত ছাড়া নিরপরাধ কাউকে এই মামলায় আসামী করা হয়নি বলে দাবী করেন।
এই ব্যাপারে মামলার বাদী নিহত ঈমান হোছনের পিতা আব্দুর রহিম জানান, ঘটনার পরদিন ইমরান নামে ১জন আসামী আটক করা হলেও অপরাপর আসামীরা এখনো পলাতক থেকে স্বপরিবারে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
স্থানীয়দের দাবী,উক্ত মামলায় আসামীরা এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারী গডফাদার,স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী এবং চিহ্নিত ডাকাত দলের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ হয়ে বড় ধরনের মাদকের চালান খালাস করে, লোকজনকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে মুক্তিপণ দাবী করে এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে খুন করে বেড়ায়। নিহত ঈমান হোছন এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সহায়তা করত। তখন আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্য আটক হওয়ায় এলাকায় কিছুটা শান্তি ফিরে আসে। গত বছর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যাকান্ড এবং প্রদীপ কান্ডের পর সর্ব শ্রেণীর অপরাধীরা এলাকায় ফিরে এসে পুরাতন অবৈধ কার্য্যক্রম শুরু করে। তখন পথের কাঁটা হিসেবে উপরোক্ত আসামীরা পরিকল্পিতভাবে ঈমান হোছনকে খুন করে তাদের অপরাধের স্বর্গরাজ্য বানাতেই নৃশংস এই হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছে সচেতনমহল।
তাই যাবতীয় অপরাধকে সমূলে ধ্বংস করতে এসব অপরাধী ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় এনে এলাকাকে অপরাধমুক্ত করা এখন সময়ের দাবী বলে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ মনে করেন।
উল্লেখ্য,গত ১১এপ্রিল (রবিবার) রাত সাড়ে ৮টারদিকে উপজেলার হ্নীলা পশ্চিম লেদার নুরালী পাড়ার আব্দুর রহিমের পুত্র,এক সময়ের আইন-শৃংখলা বাহিনীর কথিত সোর্স ঈমান হোছন (১৭) মসজিদ থেকে এশার নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরার পথে আকস্মিকভাবে স্থানীয় আবুল হোছনের পুত্র কুখ্যাত ডাকাত, স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারী আব্দুল খালেক প্রকাশ ডাকাত খালেক, আব্দুর রহমান, আব্দুল আ্উয়াল, আবুল কালামের পুত্র নাসিম, জনৈক আব্দুইয়াসহ ১০/১৫ জনের একটি গ্রুপ এসে গুলিবর্ষণ ও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে-হিছড়ে পাহাড়ের ভেতরে নিয়ে যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের পিতা স্থানীয় লোকজন নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে জাফরের ঝিরি এলাকা হতে মৃত অবস্থায় ঈমান হোছনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং পুলিশকে খবর দেয়। ###