টেকনাফ টুডে ডেস্ক : হ্নীলা ইউনিয়নের রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্ব লেদাকে মাদকসহ যাবতীয় অপরাধমুক্ত করতে হলে বিভিন্ন স্তরে কৌশলে সক্রিয় থাকা ৮/১০জনের সিন্ডিকেটের শেকঁড় উপড়ে ফেলে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
এলাকায় বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে এবং তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এখনো কৌশলে মাদকের চালান খালাস, লুটপাট, চোরাচালান ও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট নানা অপরাধের তথ্য। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সনীতির প্রেক্ষপটে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা সমুহের অব্যাহত অভিযানের মধ্যে ইয়াবাসহ আটক, ইয়াবা উদ্ধার এবং বন্দুক যুদ্ধের নিহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এই মাদক দমনে সরকারের কাংখিত সাফল্য না আসায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে এই অভিযান আরো জোরদার করার আহবান জানান। এরই আলোকে আইন-শৃংখলা বাহিনী নতুন কৌশলে এই অভিযান নতুন উদ্যমে শুরু করেন।
বর্তমানে ইয়াবা উৎপাদনকারী দেশ মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও পার্বত্যাঞ্চল রয়েছে। মূলত বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমারেখায় ৫৪ কিঃ মিটার নাফনদী রয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে দূর্গম স্থলসীমান্ত হওয়ায় নানা কৌশলে ঢুকছে মাদকের চালান। সাগর-নদীতে কোস্টগার্ড, সীমান্তে বিজিবি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময়ে বিপূল পরিমাণ মাদক ও অপরাধীরা আটক হয়। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান শতভাগ সাফল্যের কাছাকাছি এলেও বিভিন্ন এলাকায় নানা কৌশলে সক্রিয় থাকা চিহ্নিত মাদক অপরাধীদের নানামুখী চক্রান্ত অব্যাহত থাকায় মাদক বিরোধী অভিযানে শতভাগ সাফল্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব লেদার বেশীর ভাগ মানুষ সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এলাকা মাদকমুক্ত হোক তাই কামনা করেন। তাই মৃত মোঃ হোছনের পুত্র আলী আকবর (৩৭), নুর আহমদের পুত্র আক্তার, নুরুল ইসলামের পুত্র ঈমান হোছন (৩০), আহমদ হোছনের পুত্র মোঃ আমিন (৩১), সোনা মিয়ার পুত্র আলী আকবর (২৭) এবং ইয়াবার চালান মওজুদদার ও সরবরাহকারী কারান্তরীণ মুফিজুর রহমানের স্ত্রী জানোয়ারা ওরফে জানুসহ ২০/২৫জনের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট।
স্থানীয় সুত্রের দাবী,এই সিন্ডিকেটের সদস্য মৃত মোঃ হোছনের পুত্র আলী আকবর বিজিবি টহল দলের গতিবিধি পর্যন্তবেক্ষণ করে নুর আহমদের পুত্র আক্তার, নুরুল ইসলামের পুত্র ঈমান হোছন ও সোনা মিয়ার পুত্র আলী আকবরসহ পুরো সিন্ডিকেটকে তথ্য দেয়। সেই তথ্যের উপর নির্ভর করেই খালাস হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান। আর এসব ইয়াবার চালান লুটপাট, ভাগ-বাটোয়ারা, ছিনতাই ও অপহরণ নিয়ে গত ১৫দিন ধরেই উক্ত এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টারদিকে একটি বড় ধরনের ইয়াবার চালান লুটপাট, অপহরণ ও উদ্ধার নিয়ে ইয়াবা চোরাচালান জগতে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃংখলা রক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের টিম অভিযানে গেলেও তাদের খোঁজ মিলছেনা কিন্তু আড়ালেই তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তাই উক্ত এলাকার বেশীর ভাগ মানুষ এখন মাদক বিরোধী অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উপরোক্তরাসহ এসব অপকর্মে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় এনে প্রত্যক এলাকাকে ইয়াবামুক্ত করার দাবী জানান।
এই ব্যাপারে হ্নীলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, এখনো মাদকের অপতৎপরতা খুবই দুঃখজনক। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই ৯নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি হুমকির মুখে রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও যারা কৌশলে তৎপর তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
এদিকে হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অনুষ্ঠানে দ্রæত সময়ের মধ্যে অত্র ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত ঘোষণার জন্য সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা কামনা করেন।
এদিকে একাধিক সুত্রের দাবী, অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ী, সখ্যতা গড়ে তোলা চক্র, কতিপয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের ছত্র-ছায়ায় থাকা চক্র, কতিপয় সংবাদকর্মী, দপাদার-চৌকিদারসহ বিভিন্ন চক্রের ছত্র-ছায়ায় থেকে এখনো অনেক চিহ্নিত অপরাধী মোটর বাইক হাকিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাদক কারবারীদের এই ক্যাটাগরীর আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা আশ্রয় দিয়ে মাদক কারবারীদের নিকট হতে আর্থিক সুবিধা আদায় করায় পুরো হ্নীলা ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করা যাচ্ছেনা।
এই ব্যাপারে আইন-শৃংখলা বাহিনীর একাধিক বিশ^স্থ সুত্রের দাবী,মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইন-শৃংখলা বাহিনী সদা তৎপর। এই বিশাল এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ দায়িত্বশীল হয়ে এগিয়ে আসলে দ্রæত মাদকমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব হবে। যারা এখনো কৌশলে মাদক বাণিজ্য জিইঁয়ে রেখেছে পর্যায়ক্রমে তাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ।
এলাকার সচেতনমহল মনে করেন,পূর্ব-পশ্চিম লেদাসহ পুরো হ্নীলাকে মাদকমুক্ত করতে সবাইকে প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।