সাদ্দাম হোসাইন : হ্নীলায় পাহাড় অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি গ্রামে স্বশস্ত্র পাহাড়ি দূবৃর্ত্ত দলের অপহরণ করে মুক্তিপণ বাণিজ্যে স্থানীয় চাষী, বিভিন্ন পেশাজীবি ও সাধারণ মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। এই চক্রের কারণে বন্য পশুর উৎপাত থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন চাষাবাদের ফসল তুলতে ও রক্ষা করতে পারছেনা। নির্ঘুম রাত কাটে আতংকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন ধরেেনর তৎপরতা না থাকায় সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই স্থানীয় সাধারণ মানুষ এসব এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিশেষ টহল জোরদারের দাবী জানিয়েছে।
৩অক্টোবর দুপুরের দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী ভিলেজার পাড়া সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার চাষী আব্দুর রহমানের পুত্র রশিদ আহমদ (২৫) এবং ছগির আহমদের পুত্র নুর কবির (৫৫) জানান, আমরা টং ঘরে থেকে হাতির দল পাহারা দিই। গতকাল রাতে ১০/১২টি হাতির দল ধান ক্ষেতে নেমে এসে ধান খাচ্ছিল। তাদের ধাওয়া করলে গেলে পাহার হতে স্বশস্ত্র ডাকাত নেমে আসে। তাদের অবৈধ অস্ত্রের কাছে আমরা অসহায় বিধায় হাতির পাল ৫/৬ কানি ধানের চাষ খেয়ে ফেলেছে। এছাড়া শসা, ঢেঁড়শ, শীম ও পেয়ারা চাষীরা তাদের হাতে অপহরণ ও মারধরের ভয়ে মাঠে কাজ করতে যেতে পারছেনা। এই কারণে স্থানীয় বাজারে শাস-সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে।
একজন পেয়ারা বাগানের মালিক জানান,আমিও যেহেতু ডাকাতের ভয়ে বাগানে যেতে পারছিনা। তখন মহান আল্লাহর হেফাজতে এই বাগান তুলে দিলাম।
স্থানীয় এক মুরুব্বী জানান,আমরা গ্রামবাসীরা রাতে পাহারা দিয়ে রাত কাটাচ্ছি। তারা অস্ত্র নিয়ে সামনে এলে আমাদের পালিয়ে যেতে হয়। এমতাবস্থায় আমাদের সাথে আইন-শৃংখলা বাহিনী থাকলে তারা লোকালয়ে হানা দেওয়ার সাহস পেতনা।
মরিচ্যাঘোনা এলাকার লোকজন জানান,দুপুরের দিকে পশ্চিম মরিচ্যাঘোনা পাহাড়ে স্বশস্ত্র ডাকাত দল প্রকাশ্যে মহড়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে। এসব অপরাধী চক্রের সাথে বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয় লোকজনের যোগ-সাজশ রয়েছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য,গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে ৩টারদিকে একটি স্বশস্ত্র গ্রæপ মরিচ্যাঘোনার পশ্চিমে পাহাড়ে ধান চাষ পাহারা দেওয়ার সময় স্থানীয় আবুল মঞ্জুরের পুত্র মোঃ শাহজাহান (৩৫), ঠান্ডা মিয়ার পুত্র আবু বক্কর (৪০) এবং আবু বক্করের পুত্র মেহেদী হাসান (১২) কে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে আরো একটি গ্রæপ পশ্চিম পানখালীর মৃত উলা মিয়ার পুত্র নজির আহমদ (৫৫) এবং নজির আহমদের পুত্র মোঃ হোছন (২৫) কে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেই পাহাড়ে স্বশস্ত্র দুপক্ষ মুখোমুখী হলে সন্দেহের জেরধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে কৌশলে সকালে মাঃ শাহজাহান, আবু বক্কর ও মেহেদী হাসান ফিরে আসে। কিন্তু গত ১লা অক্টোবর সকাল ১০টায় মরিচ্যাঘোনার মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র মোঃ শফিক (৩০) কে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। ঐদিন বিকাল ২টারদিকে ৬লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে গুরুতর আহত ও মুমুর্ষাবস্থায় পশ্চিম পানখালীর মৃত উলা মিয়ার পুত্র নজির আহমদ (৫৫) এবং নজির আহমদের পুত্র মোঃ হোছন (২৫) বাড়িতে ফিরে আসে। সর্বশেষ গত ২রা অক্টোবর সন্ধ্যারদিকে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মরিচ্যাঘোনার মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র শফিককে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর স্বশস্ত্র দূবৃর্ত্ত দল আরো বেপরোয়া হয়ে লোকালয়ের বিভিন্ন স্থানে হানা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা না থাকায় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এদের উৎপাতে হোয়াইক্যং কম্বননিয়া পাড়া, পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যাঘোনা, খন্ডাকাটা, ভিলেজার পাড়া, বৃহত্তর লেচুয়াপ্রাং, উলুচামরী, বৃহত্তর রঙ্গিখালীর লামার পাড়া, গাজীপাড়া, জুম্মাপাড়া, আলীখালী, লেদা, মোচনী, নয়াপাড়া, শাল বাগান ও দমদমিয়ার পাহাড়ি জনপদের মানুষ চরম আতংকে রয়েছে।
হ্নীলা ১নং ওয়ার্ড মেম্বার বশির আহমদ জানান,এই ওয়ার্ডের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। এসব মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন নিশ্চিত করতে এলাকায় যেসব চিহ্নিত মাদক কারবারী ও অবৈধ অস্ত্রধারী রয়েছে তাদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা জরুরী হয়ে পড়েছে।
হ্নীলা পানখালীর ইউপি মেম্বার হোছাইন আহমদ জানান,আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। পাশাপাশি আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন,রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় কিছু মানুষ মিলে এই বাণিজ্য চালাচ্ছে। তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এই কারণে স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এবং কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আতংকে রয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার করে এলাকায় শান্তি ফিরাতে হবে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ হাফিজুর রহমান জানান,এই জাতীয় ঘটনারোধে আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি।
এদিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিশ^স্থ কয়েকটি সংস্থার সদস্যদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,পাহাড়ে অবস্থানরত স্বশস্ত্র দূবৃর্ত্ত দলের সাথে স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার অবৈধ অস্ত্রধারী ও মাদক কারবারী গ্রæপের যোগ-সাজশে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে এলাকায় অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সাধারণ মানুষ মনে করেন, ড্রোনের সাহায্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স ও স্থানীয় লোকজন মিলে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করলে পাহাড় কেন্দ্রিক এসব স্বশস্ত্র দূবৃর্ত্ত দলের কোন অস্তিত্বই থাকবেনা। ###
