জসিম উদ্দিন টিপু : সীমান্ত জনপদ টেকনাফের পাহাড় ও কৃষি অধ্যূষিত জনপদ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কোন ধরনের চিকিৎসক না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার ৭০ হাজার মানুষ এই চলমান করোনা দুঃসময়ে নানাবিধ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবিলম্বে একজন ডাক্তার পদস্থ করার দাবী জানিয়েছে সেবা প্রত্যাশীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার ১নং হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য গত ৬মাস পূর্বে শুভ্র দেব নামে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হলেও এলাকাবাসী এখনো পর্যন্ত উক্ত ডাক্তারের চেহারা পর্যন্ত দেখেনি। এই ডাক্তার না থাকার কারণে এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করত। বর্তমানে একজন নারী চিকিৎসক করোনা পজেটিভ হওয়ায় টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালসহ বেশ কিছু স্থাপনা লকডাউন করে দেওয়া হয়। এতেই মহাসংকটে পড়ে যায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশী মফস্বলের সাধারণ মানুষ। এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি মনোরম পরিবেশ ও সুরম্য দালানে তৈরী হলেও কোন চিকিৎসক এখানে অবস্থান না করার বিষয়ে বিবিধ রহস্য দেখা দেয়। তাই উপরি আয়ে কারো পকেট ভারী করার চেয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার আহবান জানান।
এই বিষয়ে কাঞ্জর পাড়ার বাসিন্দা প্রভাষক নুরুল আমিন জানান,দীর্ঘদিন ধরে এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত ছিল। রোহিঙ্গা আসার পর হোপ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সীমিত আকারে স্বাস্থ্য সেবা করত। যা মোটেও পর্যাপ্ত নেই। এখানে সরকারী কোন চিকিৎসক না থাকার কারণে স্থানীয় জনসাধারণ বিষয়টি চেয়ারম্যানের নিকট একাধিক বার অভিযোগ করেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল গাফ্ফার জানান, আমার এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য একজন সরকারী ডাক্তার অবশ্যই দরকার। আমি এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
হ্নীলা শাহ মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং স্থানীয় বাসিন্দা মৌলানা নুরুল বশর ছিদ্দিকী বলেন, এই হাসপাতালটি হোয়াইক্যংবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারী কোন ডাক্তার না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। একজন নার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সে নিয়মিত না হওয়ায় হোপ ফাউন্ডেশন একজন মহিলা সহকারী দিয়ে কোন প্রকারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এখানে সরকারী একজন ডাক্তারের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন,এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন ডাক্তার কাগজে-কলমে থাকলেও এখনো পর্যন্ত চোখে পড়েনি। সেবার পরিবেশ থাকলেও ডাক্তার না থাকায় এই সংকট বাড়ছে। করোনাভাইরাসের চরম দুঃসময়ে এই ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষের ভোগান্তি কমানো এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন মহলের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্রশীল জানান,এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন ডাক্তার পোস্টিং আছে কিন্তু বসার মতো পরিবেশ এবং স্থাপনা না থাকায় ডাক্তার সেখানে যায়না। তবে এই ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছে।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, জনস্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ মনে করেন, আমরা টাকার অভাবে দূরের ডাক্তারের নিকট যেতে পারিনা। তাই এই হাসপাতালের ডাক্তার থাকলে সহজে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ###