নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান গ্রামে বেপরোয়া জীবনযাপনে বাঁধা দেওয়ায় ব্যবসায়ী স্বামী বেলাল উদ্দিনকে পাগল সাজিয়ে কুমিল্লার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রাখা হয় ২২দিন। আর এই সুযোগে বাড়ি থেকে স্বামীর রক্ষিত নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। পরে নিরাময় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে লুটের ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী বেলাল উদ্দিন।
এ ঘটনায় স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে তার নিকট আত্মীয় স্বজন ও এলাকার সমাজপতিদের কাছে নালিশ করেন তিনি। তাতে উল্টো ক্ষিপ্ত হন স্ত্রী। এরই জের ধরে স্বামী বেলাল উদ্দিনকে হয়রানি করার জন্য আসামি করে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন স্ত্রী। গত ১৮ মে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে স্বামী বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (১৯) দুপুরে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান স্টেশনে নিরীহ ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিনকে পাগল সাজিয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রাখা ও পরে সাজানো মামলায় জড়িয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এসময় মানববন্ধনে সাংবাদিকদের কাছে স্ত্রী মনোয়ারা বেগম কতৃক ৩০ বছরের সংসার জীবনের অমানবিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী বেলাল উদ্দিন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ছাবের আহমদ ছাবু, হাজিয়ান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি শফিকুর রহমান, মাস্টার ফারুক আহমেদ, নুরুল কবির, শাহাব উদ্দিন, মসজিদের খতিব মাওলানা আবু আইয়ুব আনসারী, সমাজসেবী শামসুল আলম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা কফিল উদ্দিন, নজির আহমদ, ছৈয়দ আলম, বেলাল উদ্দিন, শামসুল আলম, রুহুল কাদের, আবদু সোবহান, ইসমাইল, বাদশা মিয়া, গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ। মানববন্ধনে উপস্থিত শতাধিক এলাকাবাসী ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিনকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে বেপরোয়া জীবনযাপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন।
হাজিয়ান এলাকার মৃত মোহাম্মদ হোসেন এর ছেলে বেলাল উদ্দিন (৫০) বলেন, প্রায় ২৮ বছর আগে চকরিয়া পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কোচপাড়া গ্রামের আব্বাস আহমদ এর মেয়ে মনোয়ারা বেগমকে (৪২) বিয়ে করি। সংসারে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে আছে, সবাই বড় হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ সংসার জীবনে স্ত্রী মনোয়ারা বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। সন্তানদের দিকে চেয়ে তাকে আমি বারবার বারণ করেছি, কিন্তু সে ঠিক আগের অবস্থায় রয়ে যায়। তাকে অনেকবার হাতনাতে ধরেছি, তারপরও সুপথে ফিরেনি।
উল্টো তার পথে বাঁধা দিয়েছি বলেই সর্বশেষ গত রমজানের মাসের (২৭ রমজান) শবে কদরের দিন সন্ধ্যার দিকে কন্ট্রাকের মাধ্যমে আমাকে চোখে গামছা পেছিয়ে হাত-পা বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের লেলিয়ে দেয়া লোকজন। পরদিন দেখি আমাকে কুমিল্লায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। পাগল সাজিয়ে আমাকে সেখানে ২২ দিন আটকে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী বেলাল উদ্দিন বলেন, ২২ দিন পর আমি বাড়ি ফিরলে দেখি স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বাড়িতে নেই। চলে যাবার সময় বাড়িতে রক্ষিত আমার নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল নিয়ে গেছে। এব্যাপারে আমি তার আত্মীয় স্বজন ও এলাকার সমাজপতি লোকজনকে বিচার দিই। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার অবাধ্য স্ত্রী মনোয়ারা বেগম আদালতে আমার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করেছে, আমাকে হয়রানি করার জন্য।
এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আমি চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তালাকনামা দিয়েছি। এখন আমি নিরাপদ পরিবেশে বাঁচতে চাই। ##