স্বাভাবিক জীবনে ফিরলো ৯ ‘জঙ্গি’

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জঙ্গিদমনে অগ্রণী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। বিগত সময়ে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, ইয়াহিয়া ও মুফতি হান্নান এবং বর্তমান সময়েও সারােয়ার জাহান ও আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন স্তরের জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সফল অভিযানের ফলে নেতৃত্ব শূন্য হয়েছে জঙ্গিরা।

আজ বৃহস্পতিবার র‍্যাবের কাছে দেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় ৯ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। সকালে র‌্যাব সদরদপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জঙ্গিদের সঠিক প্রক্রিয়ায় ডি-রেডিক্যালাইজেশন করে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের উগ্র আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে আছেন জেএমবির ছয়জন এবং আনসার আল ইসলামের তিনজন সদস্য।

আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা হলেন- শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), আসমা ওরফে রামিসা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) মো. সাইদুর রহমান (২২) এবং আবদুর রহমান সোহেল (২৮)।

ডি-রেডিক্যালাইজেশন কী
র‍্যাব জানায়, যখনই জঙ্গিরা নেতৃত্ব সু-সংগঠিত হতে চেয়েছে, তখনই অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আঘাত হেনে তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও মনােবল ধ্বংস করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াও জঙ্গিদের সূরা সদস্য, আইটি শাখা, দাওয়াতি শাখা, মহিলা শাখা, মেডিকেল শাখাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। জঙ্গিদমনে যুগােপযােগী ভূমিকা রাখতে র‍্যাব গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি র‌্যাব জঙ্গিদের ডি-র‍্যাডিক্যালাইজেশন (বি-জঙ্গিকরণ) প্রক্রিয়ায় সমৃদ্ধ করণের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিরােধী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

ডি-রেডিক্যালাইজেশন হল উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিকে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং সামগ্রিকভাবে সহনীয় নীতিমধ্যমপন্থায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি, নির্দেশনা ও আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করে থাকে। এতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর জঙ্গি বিরােধী কঠোর অবস্থান তৈরি হয়। ফলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর জোরালাে অভিযানে জঙ্গিবাদী/উগ্রবাদীদের সক্ষমতা কমে যায়।

জঙ্গিরা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না, গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়, সহিংসতার উপকরণ সংগ্রহ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারা ফেরারি জীবনের অবসাদ থেকে বিষন্নতায় ভােগে ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে ধীরে ধীরে জঙ্গিদের সক্ষমতা; শক্তি, জনবল হ্রাস পেতে থাকে। এরপর জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আত্মসমর্পণের সুযােগ করে দেওয়া হয়। এভাবে প্রক্রিয়াগতভাবে সমূলে জঙ্গি উৎখাত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ ও অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। যা জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য অবদান রাখে। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে পূণর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ, তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়ােজন হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ও সমাজের সকলের সহায়তা ছাড়া এই উদ্যোগ সফল হওয়া কষ্ঠসাধ্য। সে যেন পূনরায় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারী অব্যাহত থাকে। এইভাবে একজন জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিকে পুনরায় সমাজে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ফিরে আসা জঙ্গিরা অন্যান্য জঙ্গিদের ফিরিয়ে আনতেও ভূমিকা রাখে।

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। এজন্যই আমরা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অনেক খানি এগিয়ে গিয়েছি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে না পারলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গি দমনে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি। আমরা যে সব সময় কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করি। বিষয়টি তেমন না। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছি।’

‘নব দিগন্তে প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করেন একাডেমিশিয়ান, ইসলামি স্কলার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।