আমিনুল বাঁধন : সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাকুলসুমা বেগম (২২) নামের অন্ত:সত্তা এক নারীকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মাঝ সাগরে মৃত্যু বরন করেছে।
আজ মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে প্রসব বেদনা শুরু হলে ওই নারীকে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।
সে সেন্টমার্টিনের ৪ নং ওয়ার্ডের গুচ্ছ গ্রামের আব্দু শুক্কুরের স্ত্রী।
জানা যায়, প্রসব বেদনা শুরু হলে স্থানীয় হাসপাতালে (দ্বীপের একমাত্র ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল) নিয়ে গেলে মেডিকেল সহকারী ছাড়া কর্তব্যরত কোন চিকিৎসক না থাকায় একপ্রকার নিরুপায় হয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে অর্থাৎ সমুদ্রের মাঝপথে অন্তঃসত্ত্বা কুলসুমা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. হাবিব খান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে দশ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই । তাছাড়া মাঝেমধ্যে কোন ভিআইপির আগমন উপলক্ষে চিকিৎিসকের আগমন ঘটলেও তিনি তড়িঘড়ি করে ফিরে যান টেকনাফে। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা ও আগত পর্যটকদের জরুরী চিকিৎসাসহ অসুখবিসুখে কয়েকজন হাতুড়ে চিকিৎসকৈই ভরসা।
দ্বীপের বাসিন্দাদের দাবি শুধু কুলসুমা-ই নয়, গত আগস্ট মাসে যথা সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় দ্বীপের স্কুলছাত্র নাসিম উদ্দিন, চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) মো. রুবেলসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে সঠিক চিকিৎসা ছাড়াই।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আয়াত উল্লাহ খোমেনি বলেন, আমরা সেন্টমার্টিন বাসী বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হয়ে আসছি। নামমাত্র হাসপাতাল থাকলেও নিয়োজিত ডাক্তার’দের অনুপস্থিতির কারণে জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসাসেবা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। যার ফলে কুলসুমা সহ আরো অনেক স্বজনদের বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে আর মরতে দেখছি। অসহায় দ্বীপবাসীর পক্ষে সরকারের নিকট আকুল আবেদন, এই সমাস্যার দ্রুত অবসানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক গাইনি ও শিশু বিভাগ এবং সী এম্বুলেন্স চালু রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের মা বোন’কে বাঁচাতে চাই।
উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় দশ হাজার বাসিন্দার কথা চিন্তা করে ১৯৯৫ সালে অত্যাধুনিক ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি নির্মিত হয়। একটি অপারেশন থিয়েটার সহ চিকিৎসা সুবিধার জন্যে রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এছাড়া দুই জন চিকিৎসক, একজন মেডিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট, একজন ফার্মাসিস্ট, তিনজন সহকারী নার্স, দু’জন ওয়ার্ড বয়, একজন আয়া, একজন এমএলএসএস ও একজন নৈশপ্রহরীসহ ১৩ জনের নিয়োগ বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। স্থানীয়’রা অভিযোগ আর আক্ষেপের সুরে বলেন, দ্বীপে কোন ভিআইপি কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ভ্রমণে এলে দেখা মেলে নিয়োজিত চিকিৎসক’দের। অন্যথায়, কালেভদ্রে দেখা মেলে তাদের। এমনকি প্রথম ধাপের করোনাকালীনও চিকিৎসক’রা অনুপস্থিত ছিল বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল শুরুর পর থেকে সেখানে চিকিৎসকদের একটি টিম কাজ করছে। কিন্তু তাদের থাকার ঘরে বিদ্যুৎ-পানির দুরবস্থা। বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তার দাবি, ‘অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে চিকিৎসকের অভাব ছিল, তবে এখন থেকে টেকনাফ হাসপাতালের বাইরোটেশনে চিকিৎসকের একটি টিম দ্বীপে দায়িত্ব পালন করবে।’ দ্বীপের কোনও মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।