সীমান্তে যাতায়াতকারীদের যৌথ ডাটাবেজ করবে ডিএনসি ও সিসিডাক

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ইয়াবাসহ মাদক পাচার ঠেকাতে স্থল পথের সীমান্ত দিয়ে যাতায়াতকারী বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিকদের যৌথভাবে ডাটাবেজ করবে বাংলাদেশের নার্কোটিস কর্তৃপক্ষ (ডিএনসি) ও মিয়ানমারের সিসিডাক। এছাড়াও থাকবে নাফ নদীতে জেলে, ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ডাটাবেজে। সূত্রমতে, মিয়ানমারের সীমান্তে ইয়াবা কারখানা রয়েছে ৪৯টি। মিয়ানমার দাবি করেছে যে, সীমান্ত এলাকার গহীন অরণ্যের কারণে সে সব কারখানায় অভিযান চালানো তাদের জন্য দুরূহ। তবে সে কারখানাগুলো ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। তারা এও দাবি করেছেন যে, ইয়াবা তৈরির যে উপকরণ সিউডোএফিড্রিন ও প্রিকারসন কেমিক্যাল তা তাদের দেশে তৈরি হয় না। সেগুলো তৈরি হয় চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে। তাদের সীমান্তে নৌ ও আকাশ পথে সেইসব উপকরণগুলো ঢুকছে।
সে উপকরণগুলো আসা ঠেকাতে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাঁশ আমদানি করে। সেই বাঁশের ফাঁকা স্থান দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে পাচার করছে। কোনোভাবেই যাতে বাঁশের মধ্য দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট আসতে না পারে এজন্য উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং নাসাকা বাহিনীকে সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোল (সিসিডাক) যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোল (সিসিডাক) এর মহাপরিচালকের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল এ সভা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) মোসাদ্দেক হোসেন রেজা মানবজমিনকে জানান, ‘ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে দুই দেশ একাধিক বিষয়ে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তাদের সীমান্তে যেসব অবৈধ ইয়াবা কারখানা আছে সেগুলো উচ্ছেদ করবে।’
বৈঠকে উভয় দেশ মাদকের উৎস, মাদক পাচারের রুট এবং রুট গুলোর তথ্য বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবা কারখানার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিপাত করা হলে সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নাফ নদীতে ইয়াবা কারবারীদের ঠেকাতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে একসঙ্গে টহল ও নিয়মিত বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমার একমত পোষণ করেছে।
সূত্র জানায়, মাদক পাচার রোধে যথা সময়ে তথ্যবিনিময় এবং জড়িত ব্যক্তিবর্গের তালিকা দেয়া এবং নেয়ার ব্যাপারে তারা ঐকমত্য হয়েছেন। তারা ইয়াবা তৈরির উপাদান সিউডোএফিড্রিন ও প্রিকারসন কেমিক্যাল পাচারের তথ্য আদান-প্রদান করবেন। সূত্র জানায়, টেকনাফ ও মংডু এলাকায় বিএলও অফিস স্থাপিত হওয়ার পর এখনও তাদের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে শিগগিরই সভা হবে বলে জানিয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার নিজেই স্বীকার করেছে যে, তাদের সীমান্ত এলাকায় ৪৯ টি ইয়াবা কারখানা আছে। এর মধ্যে ৩৭ টি কারখানার তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে দেয়া হয়েছে। এ ইয়াবা কারখানাগুলো মিয়ানমারের রাখাইন, মংডু ও শান অঞ্চলে অবস্থিত। তারা শান, রাখাইন এবং মংডু অঞ্চলে বিশেষ মাদক অভিযান পরিচালনা করেছে।
অনেক কারখানা মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পরিচালনা করছে। সেগুলো বিক্রি করে তারা অস্ত্রের মজুত করে। এসব বিছিন্নতাবদী হলো, কাচিন ডিফেন্স আর্মি (কেডিআই), খেও মেও ইয়াং মৌলিয়ান গ্রুপ, হো স্পেশাল পিলিস জে হোলি ট্র্যাক্ট গ্রুপ, আনজু গ্রুপ, শান ন্যাশনালিটিজ পিপল লিবারেশন ও মাহাজা গ্রুপ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো ইয়াবা কারখানা নেই। সব কারখানা মিয়ানমারের সীমান্তে। মিয়ানমার থেকে সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ মাদক পাচার বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। মিয়ানমার জানিয়েছে যে, তাদের দেশে ৩ লাখ মাদকাসক্ত আছে। আর সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে ২৯টি।