সহস্র বছরের ইতিহাসের এক জাদুঘর

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ২ years ago

তৃষা বড়ুয়া : যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটন শহরে আগামী মাসে একটি জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম নামে এই জাদুঘরে থাকবে কৃষ্ণাঙ্গদের হাজার বছরের পথচলার দলিল। যুক্তরাষ্ট্রের শাসকশ্রেণি তাদের সঙ্গে কী অন্যায় করেছে, তা এই জাদুঘরে তুলে ধরা হয়েছে। ১০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত জাদুঘরটি নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া

কৃষ্ণাঙ্গদের জাদুঘর
ছোটবেলায় সবাই দাদা-দাদিদের কাছ থেকে হরেক রকমের গল্প শুনে বড় হয়। এসব গল্পের মধ্যে যেমন রাজা-রানী, দৈত্য-দানব, ভূত-প্রেতের গল্প থাকে, তেমনি থাকে রাজ্য দখলের কাহিনী, কোনো এক বীরের কারণে পরাধীন মানুষের মুক্তির কাহিনী। অনেকের মতো মাইকেল বোলওয়্যার মুরও ছোট থাকতে তার দাদির কাছ থেকে রবার্ট স্মলস নামে ২৩ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ বীরের গল্প শুনেছিলেন। ঊনবিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ চলাকালে সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটন বন্দরে একটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছিলেন স্মলস। পরে তিনি দেশটির রাজনীতিতে অংশ নেন; কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাঁচবার নির্বাচিত হন। বীরযোদ্ধা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা রবার্ট স্মলস ছিলেন মুরের প্রপিতামহ। ২০১৬ সালে সাউথ ক্যারোলিনা কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পান মুর। অঙ্গরাজ্যটির চার্লসটন শহরে নির্মাণাধীন ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়ামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতে বলা হয়। প্রস্তাব শুনে মুরের মনে হয়, আফ্রিকান আমেরিকানদের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরতে এর চেয়ে ভালো সুযোগ হয়তো আর আসবে না।

ঐতিহাসিক শহর চার্লসটন

সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটন শহরে কুপার নদীর তীরে গাডসডেনস জেটি একসময় দাস-ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। ঠিক সেখানেই ১০ কোটি ডলার ব্যয়ে ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী মাসে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই জাদুঘরে মুরের প্রপিতামহ রবার্ট স্মলসের বীরত্বগাথার পাশাপাশি ক্রীতদাসদের শোষণ-বঞ্চনা ও মুক্তির ইতিহাস নয়টি গ্যালারি ও একটি স্মৃতি উদ্যানে তুলে ধরা হবে। ইতিহাসবিদদের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ ৮৮ হাজার আফ্রিকানকে ক্রীতদাস হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের ৪০ শতাংশ ১৭৮৩ থেকে ১৮০৮ সালের মধ্যে চার্লসটন হয়ে দেশটিতে ঢোকেন। ১৮০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র দেশের বাইরে থেকে দাস আমদানি নিষিদ্ধ করলেও ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত দেশটির অভ্যন্তরে দাস-বাণিজ্য অব্যাহত ছিল। যন্ত্রণাদায়ক দীর্ঘ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় অনেক ক্রীতদাস অসুস্থ হয়ে পড়তেন। কেউ কেউ যাত্রাপথেই মারা যেতেন। যারা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারতেন, তাদের প্রথমে চার্লসটনের গাডসডেনস জেটির কাছে গুদামঘরে রাখা হতো। এরপর তাদের নিলামে তোলা হতো। ক্রীতদাসদের গুদামঘরগুলোতে মাসের পর মাস আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে বহু কৃষ্ণাঙ্গ গুদামঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুর বলেন, ‘ক্রীতদাসদের অবদান ও ইতিহাস সম্পর্কে সবাইকে আরও বেশি তথ্য দেওয়া ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়ামের লক্ষ্য। জাদুঘরটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ক্রীতদাসদের বড় অংশকে জাহাজ থেকে নামানো হতো। চার্লসটন, আমেরিকা তথা পুরো বিশ্বে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে কী হয়েছিল, তার নির্ভরযোগ্য দলিল উপস্থাপনের একটি জায়গা হতে যাচ্ছে এই জাদুঘর।’

কলঙ্ক মোচনের চেষ্টা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতীতের কলঙ্ক মোচনের চেষ্টা করতে দেখা গেছে চার্লসটন শহর কর্র্তৃপক্ষকে। দাস-বাণিজ্যে ভূমিকা রাখার জন্য ২০১৮ সালে চার্লসটন সিটি কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়। ২০১৫ সালের ১৭ জুন চার্লসটনের এক গির্জায় গুলি করে নয় কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেন এক শ্বেতাঙ্গ। ওই ঘটনার পর সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের আইনসভা থেকে কনফেডারেট পতাকা (গৃহযুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে বিভাজনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত) সরিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া দাস-বাণিজ্যের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সি ক্যালহুনের স্মৃতিস্তম্ভ ২০২০ সালে সরিয়ে দেয় শহর কর্র্তৃপক্ষ। মুর আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘চার্লসটন শহরে যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে, তারই ধারাবাহিকতায় জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষকে এমন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যা তাদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সেই তরুণদের জন্য যারা হয়তো কখনো জাদুঘরের দেয়ালে তাদের মতো কাউকে দেখেননি। কৃষ্ণাঙ্গদের অর্জনের বহু উদাহরণ জাদুঘরটিতে দেখে তারা তাদের আকাক্সক্ষার পরিধি সম্পর্কিত চিন্তার আরও প্রসার ঘটাতে পারবে।’

আফ্রিকানদের ইতিহাস

মুরের পর ২০২১ সালে জাদুঘরের প্রেসিডেন্ট ও সিইও হন টনিয়া ম্যাথিউস। তিনি বলেন, ‘বিশাল সময়জুড়ে আফ্রিকান আমেরিকানদের যাত্রা ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তুলে ধরবে ওই জাদুঘর। ২ হাজার ৩০০ বছর আগের প্রাচীন আফ্রিকান সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ হবে এর সময়কাল। দাসত্ব আফ্রিকান আমেরিকানদের পথচলার শুরু বা শেষ নয়। এটি তাদের যাত্রার মাঝের অংশ। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে যখন আফ্রিকা মহাদেশে ধান চাষ শুরু হয়, সেই সময়ের দলিল থেকে পরবর্তী সময়ে কৃষ্ণাঙ্গদের যাত্রা সম্পর্কে জানবেন দর্শনার্থীরা। ধানচাষের বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিল কৃষ্ণাঙ্গরা। এই জ্ঞানের জন্যই মূলত তাদের দাস বানানো হয়।’ একসময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুলার উৎপাদন হতো। সে সময় অনেকে এটিকে ফসলের রাজাও বলত। তবে তুলা ওই অঞ্চলের অর্থকরী ফসল ছিল না। অর্থকরী ফসল ছিল ক্যারোলিনা গোল্ড রাইস। এটি ধানের একটি জাত। সোনালি বীজ নামেও ডাকা হতো এই ফসলকে। সোনালি বীজ উৎপাদনের কারণে গৃহযুদ্ধের (১৮৬১-৬৫ সাল) আগে চার্লসটন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদশালী শহরে পরিণত হয়। সাউথ ক্যারোলিনার উপকূলবর্তী লোকান্ট্রি অঞ্চলে কৃষ্ণাঙ্গরা কীভাবে ধান ফলাতেন, তা ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়ামের ক্যারোলিনা গোল্ড গ্যালারি অংশে থাকবে। একই সঙ্গে গৃহযুদ্ধের আগে পশ্চিম আফ্রিকার মানুষের ধান উৎপাদন সম্পর্কিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তাদের খাটিয়ে কীভাবে চার্লসটন শহর অর্থনৈতিকভাবে চরম লাভবান হয়, তাও তুলে ধরা হবে। চার্লসটন এখন অবশ্য ধান নয়, পর্যটনশিল্প থেকে প্রচুর আয় করছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত শহরটির রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে দালানকোঠা মুগ্ধ নয়নে দেখেন, ঐতিহাসিক গির্জাগুলোর স্থাপত্যশৈলী দেখে বিস্মিত হন। এসব গির্জার কারণে চার্লসটন শহরের আরেক নাম পবিত্র নগরী।

পর্যটনশিল্পের প্রভাব

ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম যদি দর্শনার্থীদের কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আরও উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে সে ব্যবস্থাও আছে। চার্লসটনের উপকণ্ঠে কয়েকটি এলাকা আছে, যেখানে গিয়ে তারা কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। ইতিহাসবিদ ও লেখক রুথ মিলারের নেতৃত্বে অলিগলিতে হেঁটে পর্যটকরা ক্রীতদাসদের যেখানে বঞ্চনা করা হয়, সেসব স্থাপনা দেখতে পারেন। এসব স্থাপনার মধ্যে ওল্ড সেøভ মার্ট উল্লেখযোগ্য। ১৮৬০ সাল পর্যন্ত ওই ভবনে ক্রীতদাসদের নিলামে বিক্রি করা হতো। চার্লসটন শহরে পর্যটনশিল্পের বিকাশ আফ্রিকান আমেরিকানদের জন্য দুই-ধারী তলোয়ার হিসেবে হাজির হয়েছে বলে মনে করেন নাগরিক অধিকারকর্মী মাইকেল অ্যালেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আফ্রিকান আমেরিকানদের ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করায় সম্প্রতি তাকে পুরস্কৃত করা হয়। অ্যালেন বলেন, ‘চার্লসটন শহরের উপকণ্ঠে পর্যটনশিল্পের প্রসার ও একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ আফ্রিকান আমেরিকানদের জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছে। দরিদ্র এই উপকণ্ঠে ধনী ব্যক্তিরা থাকা শুরু করায় অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। ঘরবাড়ির চেহারা বদলে গেছে, নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো হয়েছে। ফলে ঐতিহাসিক এই শহরে আফ্রিকান আমেরিকানরা অনেকটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।’

চার্লসটন শহর রক্ষার লক্ষ্যে ১৮২৯ সালে কৃত্রিম এক দ্বীপের ওপরে ফোর্ট সামটার নামে দুর্গ নির্মাণ করা হয়। গৃহযুদ্ধের সময় প্রথম গোলা ওই দুর্গ থেকে ছোড়া হয়। ১৯৮০ সালে ফোর্ট সামটারে পার্ক রেঞ্জার (জাতীয় পার্কের অংশবিশেষ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে অ্যালেন। কাজ শুরু করার পর তিনি খেয়াল করেন, ফোর্ট সামটারে আফ্রিকান আমেরিকানদের ইতিহাস নিয়ে কিছু নেই। অ্যালেন তার কর্মজীবনের বড় অংশ ফোর্ট সামটারে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে ব্যয় করেন। পশ্চিম আফ্রিকায় গুল্লাহ নামে নৃ-তাত্ত্বিক এক গোষ্ঠী আছে। অ্যালেন সেই গোষ্ঠীর সদস্য। তার পূর্বপুরুষদের পশ্চিম আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসে দাস ব্যবসায়ীরা। গৃহযুদ্ধের পর গুল্লাহরা সাউথ ক্যারোলিনার দ্বীপগুলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাস করেন। বাসস্থান মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে দ্বীপগুলোতে হওয়ায় আফ্রিকান ঐতিহ্য ও ভাষা তারা ভোলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তাদের গিচি বলা হয়। ফোর্ট সামটারে কাজ করার সময় নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন শহর থেকে শুরু করে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসনভিল শহর পর্যন্ত গুল্লাহ গিচিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সহায়তা করেন অ্যালেন। আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের সংগীত, কারুশিল্প, খাবার ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে মানুষকে জানানোর লক্ষ্যে ওই কাজে হাত দেন তিনি।

চার্লসটন শহরের ঐতিহাসিক সিটি মার্কেটে গেলে গুল্লাহ ঐতিহ্যের ছাপ পাওয়া যায়। মার্কেটটিতে গুল্লাহ সম্প্রদায়ের শিল্পীদের বিশেষ ধরনের ঝুড়ি বানাতে দেখা যায়। চার্লসটন সুইটগ্রাস বাস্কেট নামে পরিচিত এই ঝুড়ি গুল্লাহদের প্রাণবন্ত সংস্কৃতির প্রতীক। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়ামের একটি দিক নিয়ে বেশ উৎফুল্ল অ্যালেন। এই জাদুঘরের একটি অংশে গুল্লাহ গিচিদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। অ্যালেন বলেন, ‘জাদুঘরটিতে গুল্লাহ গিচি সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। আমি মনে করি, ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম আশার আলো দেখাবে। লোকান্ট্রি অঞ্চল থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে থাকা গুল্লাহ গিচিদের জীবন এই জাদুঘরের মাধ্যমে পরিবর্তিত হবে বলে মনে করি।’ চার্লসটন শহরে বসবাসরত আফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর পর্যটনশিল্পসহ অন্যান্য বিষয় প্রভাব ফেলায় চিন্তিত অ্যালেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, শহরটি সম্প্রতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। অ্যালেন বলেন, ‘আমার মতে চার্লসটন শহর আফ্রিকান আমেরিকানদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন তুলে ধরতে বেশ পরিশ্রম করেছে।’

ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম বানাতে দুই দশকের মতো সময় লাগে। এত দীর্ঘ সময় নিয়ে বানানো এই জাদুঘর আগামী মাসে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর কী আশা করেন, এই প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউস বলেন, ‘আমি মনে করি, আফ্রিকান আমেরিকানদের কাহিনী সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাহিনী। কী নেই এই কাহিনীতে? ট্র্যাজেডি, ভালোবাসা, যুদ্ধ, গণতন্ত্র নির্মাণ এই কাহিনীর প্লট। আমরা যদি গল্প না বলি, তাহলে কেউ কিছু শিখতে পারবে না। চার্লসটন শহরে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে যে অন্যায়-অবিচার হয়েছে, তা একসময় মানুষ বলতে ভয় পেত কারণ সেখানে রক্ত আছে, যন্ত্রণা আছে, গোঙানি আছে। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিয়াম স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করি। এটি মার্কিনিদের মনে করিয়ে দেবে, কতদূর তারা এসেছে এবং আরও কতদূর তাদের যেতে হবে।’ তিনি বলেন, “কৌতূহল উদ্দীপক কোনো কিছু দেখে মানুষের ভুরু ওপরে উঠে যাওয়া পছন্দ করি। আমি চাই না, একটি জাদুঘরে গিয়ে মানুষ কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস সম্পর্কে সব জেনে-বুঝে ফেলুক। কোনো সম্প্রদায়ের ইতিহাস পুরোপুরি তুলে ধরা কোনো একক জাদুঘরের পক্ষে সম্ভব নয়। সফলতা আসবে তখনই যখন তারা কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ভাববে। ‘আফ্রিকানদের সম্পর্কে অনেক কিছুই আমি জানি না, বই পড়ে আমার জানাবোঝা বাড়াতে হবে’জাদুঘরে আসার পর কেউ যখন এমনভাবে ভাবতে শুরু করবেন, তখনই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।”