নুরুল করিম রাসেল, টেকনাফ টুডে ডটকম |
বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদীতে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-শিশুসহ ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। রবিবার মাঝ রাতে টেকনাফের জাদীমুড়া সীমান্ত বরাবর নাফ নদীর মাঝখানে নৌকা ডুবির এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে জাদিমুড়া এলাকার একটি ট্রলার নদীতে ভাসমান অবস্থায় ২০ জনের মতো রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে উদ্ধার করলেও নৌকায় থাকা শিশুসহ ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে নৌকাডুবির এ ঘটনায় রোকেয়া বেগম নামে এক নারী প্রানে বাঁচলেও তার ৩ সন্তান নিখোঁজ রয়েছে। একই সাথে ৩ সন্তানকে হারিয়ে রোকেয়া ও তার স্বামী হুমায়ুন কবির পাগল প্রায়।
সোমবার বিকালে হ্নীলা এলাকায় উদ্ধার হওয়া এই দম্পতির সাথে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার রাতে মিয়ানমারের মংডু রাইম্যাবিল এলাকার কয়েকশো নারী পুরুষ কয়েকটি নৌকায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিল।
তাদের নৌকাটিতে নারী-শিশুসহ প্রায় ৩০ জনের মতো ছিল। নৌকাটি মাঝ নদীতে আসার পর ছিদ্র হয়ে সেটি নদীতে ডুবে যায়। এসময় তাদের সাথে থাকা কয়েকটি পরিবারের ৭টি শিশু নদীতে ভেসে যায়। এদের মধ্যে হুমায়ুন কবির ও রোকেয়ার ৩ সন্তান রয়েছে। আনোয়ার ইব্রাহিম (৮), আফসান বিবি(৫), ইমরান(৩) নামে তাদের ৩ সন্তান হারিয়ে এই দম্পতি পাগল প্রায়। এছাড়া আরো ৪ শিশুসহ ১০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে।
৩ শিশুর পিতা হুমায়ুন কবির বিলাপ করতে করতে আরো জানায়, নিজ ভিটা বাড়ি ছাড়তে সে কখনো রাজী ছিল না, কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের ধর্ষন করায় ভয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিল। কিন্তু সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে হারাতে হলো প্রানের সন্তানদের। এসময় সে মাথা কুটে কুটে বিলাপ করছিল। এর আগে সকালে নাফ নদীর তীরে সন্তানদের জন্য এই দম্পতির আহাজারি স্থানীয়দের নাড়া দেয়।
এদিকে সন্ধা ৭ টার দিকে পুলিশ নাফ নদীর আড়াই নং স্লুইস গেইট সংলগ্ন নাফ নদী থেকে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে। টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক মাসুদ মুন্সি লাশটি উদ্ধার করেন। ধারনা করা হচ্ছে এটি নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ কোন রোহিঙ্গার লাশ হতে পারে।
এছাড়া নাফ নদী থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার এক নারীকে বিজিবি হেফাজতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেলেও এব্যাপারে বিজিবির বক্তব্য না পাওয়ায় সত্যতা জানা যায়নি।
অনুপ্রবেশ অব্যাহত : এদিকে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দালাল সিন্ডিকেটের সহায়তায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রবিবার রাতেও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও ক্যাম্প সংলগ্ন রোহিঙ্গা বস্তি, টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা রস্তি, নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ও ক্যাম্প সংলগ্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়ি এবং টেকনাফে পূর্ব থেকে থাকা তাদের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের তাদের গ্রাম ছেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনী নাকি বলছে তোমরা মিয়ানমার ছেড়ে যেখানে ইচ্ছে চলে যাও।
এদিকে টেকনাফস্থ বিজিবি ২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বিজিবি।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. নাফিউর রহমান জানান, সীমান্তে কোস্টগার্ড সতর্ক রয়েছে ও নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।
তৎপর দালাল সিন্ডিকেট : মিয়ানমার থেকে পলায়নপর রোহিঙ্গাদের নিয়ে আদম বানিজ্যে মেতে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। সীমান্তের আদম ঘাটের এইসব দালালরা রোহিঙ্গাদের এ পারে নিয়ে অাসার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তেমনি ভাবে রবিবার রাতে নৌকাডুবির ঘটনায় দালাল সিন্ডিকেট জরাজীর্ণ নৌকায় আদম বানিজ্য করতে গিয়ে এ দূর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছে।