সমুদ্র জলসীমায় নতুন গ্যাসের উৎসের সন্ধানে

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। যে কারণে জ্বালানি চাহিদা মোকাবেলা করতে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। একই সঙ্গে আবিষ্কারের দিকটি বিবেচনা করছে। সেই বিবেচনায় সমুদ্র জলসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে মডেল পিএসসির খসড়া তৈরি করেছে। যে খসড়া হতে যাচ্ছে আগের চেয়ে আরও আর্কষণীয় ও বিনিয়োগ বান্ধব। আর এই পিএিসসির মডেলটি তৈরি করেছে পেট্রোবাংলা। বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অফশোর মডেলটি অনুমাদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার ফলে এক বিশাল জলসীমা এ দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমুদ্র এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ইতোমধ্যে অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০১২ আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু বেশি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি এতে অংশগ্রহণ করেনি। ফলে মডেল পিএসসি আরও আকর্ষণীয় ও বিনিয়োগ বান্ধব হবে।

জানা গেছে, অফশোর মডেল পিএসসির অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য ১৫ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। খসড়া অফশোর মডেলে একটি ক‚প খনন করার বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উৎপাদনের সময় শেষের দিকে তেল ও গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন বজায় থাকলে পেট্রোবাংলা ৫ বছরের সময় বাড়ানোর যে বিধান রয়েছে, তা ১০ বছরে করা হয়েছে। কন্ট্রাক্টরকে তাদের দাখিল করা ব্যাংক গ্যারান্টিতে আলাদাভাবে সাইসমিক সার্ভে ও ডিলিংয়ে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।

খসড়া অফশোর মডেল পিএসসিতে গভীর সমুদ্রের জন্য বাপেক্সের জন্য পরিবহন খরচের পরিমাণ ৫ শতাংশ আর অগভীর সমুদ্রের জন্য ১০ শতাংশ বহাল থাকবে। ব্লো আউট সংঘটিত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দাখিলের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। কন্ট্রাক্টর পেট্রোবাংলাকে ৪ শতাংশ ট্যারিফ দিতে হবে। আর তা শুরু থেকে দিতে হবে।

অফশোর মডেলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চার মাসের মধ্যে বেশি সময় অবস্থানকারী বিদেশিরা নিজেদের খরচে তাদের নিজস্ব বাসস্থান ভাড়া করতে হবে। মেজারম্যান্ট পয়েন্টের লোকেশন স্থলভাগ করা হয়েছে। কারণ পেট্রোবাংলা কেবলমাত্র প্রসেসড গ্যাস কন্ট্রাক্টর থেকে গ্রহণ করবে। সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হলে সে গ্যাস কন্ট্রাক্টর স্থলভাগ পর্যন্ত পরিবহন করে পেট্রোবাংলাকে সরবরাহ করবে।

অফশোর মডেলে বলা হয়েছে, অগভীর সমুদ্রাঞ্চলের ব্লকগুলোর বাধ্যবাধকতা ড্রিল বাতিল করে গভীর সমুদ্রাঞ্চল ব্লকের মতো করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানের সময় প্রথম ৫ বছর। এই সময়কালে প্রথম ৩ বছর সাইসমিক সার্ভে পরিচালনার পর কন্ট্রাক্টর জানাবে, খননযোগ্য প্রসপেক্ট আছে কিনা? না থাকলে তারা চলে যেতে পারবে। অন্যদিকে, প্রসপেক্ট থাকলে পরবর্তী ২ বছরের জন্য প্রবেশের জন্য ১টি কূপ খনন করবে।

অফশোর দুই ব্লকে কন্ট্রাক্টর যে উন্নয়ন পরিকল্পনা দাখিল করবে তার মূল্যায়নের রিপোর্ট দাখিলের সময় ছিল পরবর্তী ১৮০ দিন। কিন্তু গভীর সমুদ্রের তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বেশ সময় সাপেক্ষ। সেই বিবেচনায় উন্নয়নের পরিকল্পনার দাখিলের সময় এখন ৩৬৫ দিন করা হয়েছে। কন্ট্রাক্টর তার মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ প্রেট্রোবাংলার অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় পক্ষের কাছে নেগোসিয়েটেড প্রাইসে বিক্রি করতে পারবে। গ্যাসের মূল্যের সিলিং টন প্রতি ২০০ ডলার থেকে ২১৫ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতি বছর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ২ শতাংশ পরিবর্তে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার শর্ত সাপেক্ষে গ্যাস রফতানির সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সুযোগ কেবলমাত্র গভীর সমুদ্রাঞ্চলের ব্লকের জন্য প্রযোজ্য।
অফশোর মডেলে আরও যে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা হলো, গভীর সমুদ্রের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, স্থলভাগ থেকে বেশ দূরত্বে গভীরতম সমুদ্রে কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হলে সে গ্যাস পরিবহনের জন্য পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হয়। এই পাইপ লাইন যদি কন্ট্রাক্টর নির্মাণ করে তা হলে নির্মাণের ব্যয় ও ট্যারিফ পাবে।