সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বন্ধু দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন কেন?

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৮ years ago

ভারতের সঙ্গে সই হওয়া প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) সমালোচনাকারীদের কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে ভারত সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ জবাব দেন।

প্রতিরক্ষা সমঝোতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত মিত্রবাহিনী হিসেবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। ভারতের সেনাবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। বন্ধুপ্রতিম এদেশের সঙ্গে এমওইউ করতে এসে প্রশ্ন কেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করলাম, যারা আমাদের বিরোধিতা করল- তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তি নিয়ে কথা নেই। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করল তাদের সঙ্গে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) করা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করি না। দেশের মর্যাদা আমার কাছে অনেক বড়। যেখানে আমি আছি, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কিছু আমি বেঁচে থাকতে হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিফেন্স চুক্তির ব্যাপারে আম এটুকু বলব, এটা আমরা আর একটা এমওইউ স্বাক্ষর করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এখানে বিভ্ন্নি ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।’

এর মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে তাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তা হলো- বিভিন্ন কাঠামোগত সহযোগিতা, দুই দেশের সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও আলোচনা সভা, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত অনুষ্ঠান উদযাপন, দুই দেশের সামরিক প্রশিক্ষক ও পর্যবেক্ষক বিনিময়, সামরিক সরঞ্জমাদি সংরক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, ক্রীড়া ও দুঃসাহসিক অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা, দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা সহযোগিতা, স্টাফ পর্যায়ে বার্ষিক আলোচনা, দুদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ ও বিমান বাহিনী উড়োজাহাজের সফর বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা সম্বলিত টহল ও অনুশীলন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে বেলারুশ, চীন, ফ্রান্স,কুয়েত, রাশিয়া এবং তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে।

অন্যদিকে ১৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমঝোতা ও চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। এসব দেশ হলো- বাহরাইন, চেক প্রজাতন্ত্র, ইতালি, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সার্বিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে- আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ভারতের সামরিক বাহিনীর অবদান রয়েছে। তাদের অনেকে জীবন দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন স্বাধীন দেশ। আমাদের দেশের তুলনায় আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলছি। তারপরও কিন্তু জ্ঞানের শেষ নেই, শিক্ষার শেষ নেই, প্রশিক্ষণের শেষ নেই। সেদিক লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কাঠামোগত সহযোগিতার জন্য এমওইউ করেছি।’

ভারতের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক স্বার্থ বজায় রেখেই সব করা হবে। কোন দেশ থেকে কী কিনব তা নিয়ে কোনো বাইন্ডিংস (ধরাবাধা নিয়ম) নেই।

প্রতিরক্ষা এমওইউর সমালোচনার ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সন্দেহ করছেন, নানা কথা বলছেন তারা বলবেনই। তাদের চরিত্র আমার জানা আছে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে- যেখানে আমি আছি, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কিছু আমি বেঁচে থাকতে হবে না।’

ভারত সফরে ৩৫টি চুক্তি ও এমওইউ সই হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যে ১১টি চুক্তি ও ২৪টি সমঝোতা স্মারক। দুদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ৯ বিলিয়ন (নয়শ’ কোটি) ডলারের ১৩টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকও এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।