শামীম ইকবাল চৌধুরী : নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে শনিবার ১৪ সেপ্টম্বার সকালে মদিনাতুল উলুম আলীম মাদরাসায় অধ্যক্ষ- শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ত্রি-মূখী সংঘাত ও অস্বাভাবিক আচরণের প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কাটেনি। মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরে না আসায় অভিভাবকদের মাঝে এই শংকা তৈরী হয়েছে।
অভিভাবকদের দাবী, রোববার মাদরাসা যথারীতি খুললেও প্রতিবাদকারী সেই ৪ শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ অনুপস্থিত ছিলেন মাদরাসায়। শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরো করুন। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে আসলেও তাদের আচরণ মারমূখী। অনেক অভিভাবক সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদরাসার কম্পাসে বাইরে অপেক্ষা করতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা আরো জানান, শনিবার সকালে সংঘঠিত ঘটনার পর রবিবার মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন মাদরাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর পরিবর্তে ক্লাস পরিচালনা করেন নন এমপিও আরবি প্রভাষক রফিকুল ইসলাম।
এছাড়াও ঘটনার দিন অবরুদ্ধ থাকা ১০ শিক্ষকের মধ্যে নিরাপত্তা বিবেচনায় মাদরাসার সহকারী সুপার আবু বক্কর, সিনিয়র শিক্ষক তাজেম উদ্দিন, ইছহাক ও ছৈদুল বাশার অনুপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গত রবিবার মাদরাসার নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে কমিটির সভাপতিকে সাথে নিয়ে মাদরাসা পরিদর্শন করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার সোহেল মিয়া।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে তিনি মাদরাসার স্বাভাবিকতায় সহযোগিতা চাইলে কয়েকজন ছাত্র আক্রমানাত্মক আচরণ দেখান তার প্রতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান- অধ্যক্ষের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি নবম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্র একাডেমিক সুপার ভাইজার এর সাথে আক্রমনাত্মক আচরণে অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তির দাবি জানান। তিনি আরো জানান- মাদরাসায় অন্তত ৭শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শনিবারের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেনি। যেমন দ্বাদশ শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেন। একাদশ থেকে শিশু শ্রেণি পর্যন্ত একই অবস্থা দেখেছেন তারা।
অপর দিকে গত রবিবার নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানান, মাদরাসা অধ্যক্ষ মৌলানা ছৈয়দ হোছাইন এবার ফোনে ফোনে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রনে আনতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন বারবার। যেন তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে চাপ সৃষ্টি হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার সোহেল মিয়া বলেন-রোববার মাদরাসা পরিদর্শনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখেছেন মোটামুটি। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক মনে হয়েছে তার কাছে। তিনি দাবি করেন- প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছেন। তারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে উভয় প্রকার কৌশলে তদন্ত করছেন, আরো করবেন।
এদিকে একাধিক অভিভাবক উদ্বেগ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনা যেদিকেই যাক না কেন-নাইক্ষ্যংছড়ির এ মাদরাসা যেন ফেনীর সেই বহুল আলোচিত সিরাজদৌল্লাহর মাদরাসার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় ! আর এ মাদরাসায় যেন নব্য সিরাজদৌল্লাহর জন্ম না হয় !
আর এদিকে, সেই আলোচিত মদিনাতুল উলুম আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি করা দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে সংঘাতের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন এর সহকারী শিক্ষকদের মাঝে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের অনুসারী ছাত্রদের হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ১০ শিক্ষক। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।