শেয়ারবাজারে বড় ধস

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

প্রধান সূচক আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে * এক দিনেই বিনিয়োগকারীদের ৫ হাজার কোটি টাকা হাওয়া

যুগান্তর |
দেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধস দেখা দিয়েছে। রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় একশ’ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩ পয়েন্টে।

এই সূচকটি ২ বছর ৬ মাস ২৪ দিনের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর-২০১৬ সালে সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২৭ পয়েন্টে।

মূল্য সূচকের ধসে পড়ায় এক দিনেই বিনিয়োগকারীদের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। এদিন বাজারে ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। শেয়ারবাজারের দরপতন হচ্ছে কয়েক মাস ধরেই। তবে দুই সপ্তাহ ধরে দরপতনের মাত্রা বেড়েছে। শেষ ১১ কার্য দিবসের মধ্যে ৯ কার্য দিবসই দরপতন হয়েছে। বাজারের এমন দুরবস্থায় প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা সিংহভাগ বিনিয়োগকারীরাই এখন দিশেহারা।
রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িযেছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা আগের কার্য দিবসের লেনদেন শেষে ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানেই বাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে।

এদিকে দরপতনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিলেও এর পেছনের যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট ছিল। এখনও তা কাটেনি। আর আস্থা সংকট না কাটলে বাজার ইতিবাচক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তিনি আরও বলেন, বাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার কথা আসছে। কিন্তু প্রণোদনা দিলে বাজারে সাময়িকভাবে উপকৃত হয়। এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তার মতে, দেশের শেয়ারবাজার অবমূল্যায়িত। কিন্তু বিনিয়োগ হুজুগে মাতে। এতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্বাচনের পর ইতিবাচক হয়েছে বাজার। এ সময়ে বাজারের লেনদেনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল। হাজার কোটি টাকার ওপরে ছিল ডিএসইর লেনদেন। একই অবস্থা মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনের ক্ষেত্রে। তবে বর্তমানে তা আবার ছন্দপতন হয়েছে। ৬ মাসের ব্যবধানে লেনদেন, সূচক ও মূলধন তিনটিই নিম্নমুখী। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ডিএসইর লেনদেন ছিল ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। ১৪ ফেব্রুয়ারি তা কমে ৯৩২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আর সর্বশেষ ২১ জুলাই তা ৩৬৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আলোচ্য সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্ট থেকে কমে ৫ হাজার ৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্য দিবসের তুলনায় ৯৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি অপর দুটি সূচকেরও বড় পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর শরিয়াহ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে। সব সূচকের পতনের পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৬১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৭৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। মূল্য সূচক ও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি এদিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে ৩৬৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্য দিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের ১৫ কোটি ৬৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া বাজারটিতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই সিরিঞ্জ, বেক্সিমকো, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাতবদল হওয়া ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ২২৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দাম। লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।