শান্ত-মুশফিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ওডিআই সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ২৫৫ রানের লক্ষ্যে একশ রানের আগেই নেই ৪ উইকেট। বাংলাদেশের জয়ের আশায় তাতে জড়ো হয়েছিল শঙ্কার কালো মেঘ। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

জয়ের পথে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন শান্ত ও মুশফিক। ঝলমলে সেঞ্চুরি এসেছে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে। ১২২ রানে অপরাজিত শান্ত অধিনায়ক হিসেবে পেলেন প্রথম সেঞ্চুরি। সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের পর পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন শান্ত। আরেক পাশে অনবদ্য ব্যাটিং করা মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৭৩ রানে। দুজনে গড়েছেন ১৬৫ রানের অপরাজিত জুটি। শ্রীলংকার বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটি। এর আগের রেকর্ড ছিল ১১১ রানের। শ্রীলংকার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিও এটি।

২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এদিন প্রথম বলেই লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। ২৩ রানের মধ্যেই ফেরেন সৌম্য সরকার ও তাওহীদ হৃদয়। এরপর শান্তকে সঙ্গ দিতে পাঁচে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নেমেই বাহারি সব শট খেলতে থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। আরেক পাশে শান্ত ছিলেন ধীরস্থির। এই দুজনের জুটি থেকে আসে ৬৯ রান। ৯২ রানে লাহিরু কুমারার বলে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ (৩৯ বলে ৩৯)।

মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও অবিচল ছিলেন শান্ত। এ সময় ব্যাটে রানের গতিও বাড়ান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫২ বলে তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। মুশফিকও আরেক পাশে তাকে দেন উপযুক্ত সঙ্গ। তিনি হাফ সেঞ্চুরি পান ৫৯ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন এই দুজন। ১২২ রান করার পথে ১৩টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কা মারেন শান্ত। আর ৭৩ রান করা মুশফিক মারেন ৮টি চার।

এর আগে, প্রথমে ব্যাট করে তানজিম হাসান সাকিব-তাসকিন আহমেদের তোপে ২৫৫ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। তবে যেভাবে তারা শুরুটা করেছিল, তাতে অনায়াসেই তিনশ রান চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দলীয় ৫০ রান তারা করে মাত্র ৪০ বলে। ওয়ানডেতে দলে ফেরা পাথুম নিশাঙ্কা আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে রান তুলতে ব্যর্থ আবিষ্কা ফার্নান্দো ছিলেন হাতখোলা। এই দুজনের ঝড় থামে দশম ওভারের পঞ্চম বলে, শ্রীলংকার রান তখন ৭১। তানজিম হাসান সাকিবের করা দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন আবিষ্কা। ৩৩ বলে ৫টি চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রান করে ফেরেন তিনি।

প্রথম দশ ওভারে ওই ১ উইকেট হারিয়েই ৭১ রান তোলে লংকানরা। নিজের তৃতীয় ওভারে আবারও সাকিবের আঘাত। এবার স্লিপে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান নিশাঙ্কাকে। ২৮ বলে ৫টি চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। সাকিব ‘শো’ সেখানেই শেষ হয়নি। নিজের করা চতুর্থ ওভারেও উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। দলীয় ১৪তম ওভারের প্রথম বলে নতুন নামা সাদিরা সামারাবিক্রামাকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। উড়তে থাকা শ্রীলংকা হঠাৎ ৩ উইকেট হারিয়ে হয়ে পড়ে দিশেহারা।

চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস ও লিয়ানাগে। এই দুজন বেশ ধীরগতিতে রান করেছেন। ১২৮ রানের মাথায় মিরাজের দুর্দান্ত এক বলে বোল্ড হন আসালঙ্কা। এরপর মেন্ডিসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিয়ানাগে। তিনি ব্যাটিংয়ে নামার পরই চিত্র বদলে যায়। দারুণ স্ট্রাইকে রান তুলতে থাকেন তারা। ৬৮ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়ে ১৯৭ রানের মাথায় ফেরেন মেন্ডিস। ততক্ষণে হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেছে তার। এরপরে উইকেটে নেমে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ২২১ রানের মাথায় তাসকিনের বলে ফেরেন এই তারকা। তবে আরেক পাশে দারুণ খেলতে থাকা লিয়ানাগে ঠিকই দারুণ খেলতে থাকেন। ৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তুলে নিয়েছেন তৃতীয় ফিফটি। ২২৫ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন মহেশ থিকসানা। ২৪৪ রানে লিয়ানাগেকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ৬৯ বলে ৩টি চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৫৫ রানে অলআউট হয় লংকানরা।

বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন তিন পেসার তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলাম ব্যর্থ হলেও দারুণ উজ্জ্বল ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১টি উইকেট পেলেও ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩৩ রান দিয়েছেন তিনি।