টেকনাফ টুডে ডেস্ক : লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী গ্রামে পোষা হাতি দিয়ে পরিবেশ উজাড় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হাতি মালিকের দুরাচারে অতিষ্ট দুর্গমের উপজাতিরা। জঙ্গলের উগ্রপন্থিদের সাথে হাতি মালিকের যোগসাজস, চাঁদা আদান প্রদানের সম্ভাবনার দাবী করছে স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্থ এক ত্রিপুরা যুবকের অভিযোগ সূত্রে লামা উপজেলায় ১৬টি পোষা হাতি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি উপজেলার রুপুসিপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ঈশ্বর চন্দ্র নামের এক ত্রিপুরার যুবকের অভিযোগসূত্রে জানাযায়, লামা ইউনিয়নের দুর্গম পোপা এলাকায় ১৬টি পোষা হাতি রয়েছে। এসব হাতির মালিক সিলেট মৌলভী বাজার নিবাসি জনৈক মালয় কোম্পানী। জানাগেছে, ২০০০ সাল থেকে লামা উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় সরকারি খাস অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বড় বড় বৃক্ষ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে এসব হাতি। হাতির মালিকদের সাথে প্রভাবশালী একটি কাঠ ব্যবসায়ী চক্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসব করে আসছে। এ চক্রটি পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোটাংকের চাঁদা দিয়ে তাদের নির্ঞ্ঝাঁট কর্মতৎপরতা চালিয়ে আসছিল।
২০০৬ সালে সেনাবাহিনী আলীকদম জোনের অভিযানে লামা বন বিভাগ বেশ কয়েকটি হাতি আটক করেছিলো। পরবর্তীতে এনিয়ে মামলা হয় এবং আটককৃত হাতিগুলো বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে রাখা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততায় সম্প্রতি প্রভাবশালী ওই গ্রæপটি আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। বিনা অনুমতিতে হাতি রাখা ও হাতিদ্বার শত বর্ষি বৃক্ষ উজাড় করছে।
২০০৬ সালের ওই অভিযানের ফলে বেশ কিছুদিন হাতিদ্বারা গাছ আহরণ বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি আবারো পোষা হাতিদ্বারা দুর্গম পাহাড়ের গাছ আহরণ করার তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের প্রভাব শালী কাঠ ব্যাসায়ী একটি চক্র স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব করছেন বলে জানাযায়। এই গ্রæফটি পাহাড়ের অশ্রেণিভুক্ত ভ‚মি থেকে শতবর্ষি বিভিন্ন প্রজাতির মা গাছ (মাদার ট্রি) উজাড় করছে। জানাযায়, ইলিট্রিক করাত দিয়ে বিশাল আকারের শত বছর তারো বেশি বয়সী প্রাকৃতিক সৃজিত গর্জন, চাম্পাফুল গাছ কর্তন ও হাতিদ্বারা আহরণ করছে।
লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম দোছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বরচন্দ্র ত্রিপুরার, লিখিত অভিযোগে জানাযায়, এখনো ওই এলাকায় ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এ থেকে গর্ভবতী একটি হাতি জঙ্গলে নিখোঁজ হয়। হাতির মালিক নিখোঁজ হাতিটি সন্ধান করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র ত্রিপুরাকে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব দেয়। ৪৫ দিন তল্লাশি করে কয়েকজন মিলে ঈশ্বরচন্দ্র ত্রিপুরার নেতৃত্বে নিখোঁজ হাতিটি খুঁজে পায়। কিন্তু হাতি মালিক মালয় কোম্পানী পূর্ব প্রতিশ্রæতিমতে সন্ধানদাতাদের কোন ধরণের পারশ্রমিক দেননি। উপরন্ত স্থানীয় এইসব যুবকদের নামে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে হুমকি প্রদান করে। ঈশ্বরচন্দ্র ন্যর্য পারিশ্রমিক পাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন মহলে আবেদন করেন।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, হাতির মালিক মালয় কোম্পানীর সাথে বান্দরবান ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক প্রভাবশালীদের দহরম সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে তিনি কারোর তোয়াক্কা না করে লামা উপজেলাসহ সীমানাবর্তী আলীকদম ও থানছি উপজেলার শতবর্ষি বিভিন্ন প্রজাতির মা গাছ (মাদারট্রি) নির্বিঘেœ উজাড় করে চলছে। এসব কর্তনকৃত কাঠসমুহ লামা ও বান্দরবান বন বিভাগের প্রদত্ত জোত পারমিটের অনুবলে পাচার হয় বলে জানাযায়। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ের সশস্ত্র উগ্রপন্থিদেরকে টাকা দিয়ে দুর্গমে এসব হচ্ছে। লামা-আলীকদম ও বান্দরবান সড়ক পথে জোতের অনুমোদিত কাঠের সাথে এসব পাচার হয়। সরকারি সংরক্ষিত কিংবা অ-রক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যমান কোন মাদার ট্রি (মা গাছ) কর্তন, আহরণ বন আইনে সম্পুর্ন নিষিদ্ধি। কিন্তু লামা-আলীকদম ও থানছি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের (সরকারি খাস-অরক্ষিতি) প্রাকৃতিক সৃজিত শত বর্ষি- গর্জন, চাম্পাফুলসহ মা গাছ কর্তন ও আহরণ হরদম চলছে। দুর্গম ওইসব এলাকার পাহাড়ে কর্তিত গাছের গোড়ালি গুলোই প্রমান করবে কিভাবে উজাড় হয়েছে শতবর্ষি বৃক্ষরাজি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু সংরক্ষিত বনাঞ্চল নয়, সেহেতু বিষয়টি আমাদের এখতেয়ারে পড়েনা। তিনি বলেন, লামা উপজেলায় হলেও হাতিদ্বারা যদি গাছ আহরণ হয়ে থাকে, তা বান্দরবানের বিভিন্ন পথে যেতে পারে। এর পরেও যদি লামা নদী পথে এসব গাছ আনা হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের লোকজন তা জব্দ করবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, উপজেলার পোপা ও লুলাইন মৌজায় যেখানে হাতি রয়েছে, দুর্গম এলাকা হেতু লামা বন বিভাগের পক্ষে কোন ব্যাবস্থা নেয়া কষ্ট সাধ্য। অশ্রেণিভুক্ত বন উজাড় বন্ধে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাস কিংবা অশ্রেলিভুক্ত বন রক্ষায় নয় শুধু জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা সবখানে রয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর এ জান্নাত রুমি বলেন, বিনা অনুমতিতে হাতিদ্বারা গাছ আহরণ কিংবা হাতি রাখা আইনত দ্বন্ডনীয়। তিনি বলেন হাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে হাতির মালিক মালয় কোম্পানীকে ফোন করা হলে, তিনি রিপোর্টারদের সাথে কথা বলতে নারাজ।
স্থানীয়রা দাবী করেন, হাতির মালিক ও বৃক্ষ উজাড়-পাচারকারীদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজস রয়েছে। তার কারণে অন্য প্রশাসন এই অভিযান করবেন না(!)। এই বাস্বতায় সেনাবাহিনী অভিযান না করলে পোষা হাতিদ্বারা গাছ আহরণ বন্ধ সম্ভব হবেনা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল নজরে আনা প্রয়োজন।