লকডাউন মেনে চলা জরুরি

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : দেশে চলতি দফায় ‘লকডাউন’ বা কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে সরগরম আলোচনা চলেছে কদিন ধরেই। করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি কমিটির পুরোপুরি ‘শাটডাউন’ করার সুপারিশ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকার ২১ দফার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এ ‘লকডাউন’ চলবে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে প্রয়োজন হলে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারের কর্মকর্তারা। মনে করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দফায় জারি করা ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধের চেয়ে এবারের ‘লকডাউনই’ হবে সত্যিকার অর্থেই কঠোর। এক সপ্তাহের এ বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা জেলাপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। এসব নির্দেশনা ও প্রস্তুতিতে যেমন, তেমনি বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধের প্রথম দিনেই ‘যৌক্তিক কারণ ছাড়া’ বাইরে বের হওয়ায় সারা দেশে কয়েকশ মানুষকে আটক করার মধ্য দিয়েও মানুষের কাছে কঠোরতার একটা বার্তা পৌঁছেছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সারা দেশে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ পরিপালনের যে পরামর্শ দিয়েছেন সেসব কার্যকর করায় প্রশাসনের কঠোরতা যেমন জরুরি তেমনি বিধিনিষেধ মেনে চলায় জনসাধারণের আন্তরিকতাও জরুরি।

এখন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা চলছে সেটা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, দ্বিতীয় ঢেউ শেষ করে বাংলাদেশ এখন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের চূড়ার দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জন্য সারা দেশ করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এর মধ্যে খুলনার অবস্থা বেশি খারাপ। লক্ষ করা দরকার, গত বুধবার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮২২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগী শনাক্তের পাশাপাশি বুধবার মৃত্যুতেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে দেশে। মারা গেছে ১১৫ জন। তার আগের দিন মারা গেছে ১১২ জন। এমনকি রোগী ও মৃত্যুর রেকর্ডের পাশাপাশি ১১ মাস পর বুধবার পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ। যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বুধবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে এবং তৃতীয় ঢেউটি এখন চূড়ার দিকে যাচ্ছে। গত ঈদের পর থেকেই তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সংক্রমণ যদি এতটা না বাড়ত, তাহলে তা দ্বিতীয় ঢেউয়ের লেজ হিসেবে থাকত। বর্তমান সংক্রমণ দ্বিতীয় ঢেউকে অতিক্রম করে ফেলেছে। এটাই সবচেয়ে বড় ঢেউ হচ্ছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যবিদরা জানাচ্ছেন, শুধু গত এক মাসেই রোগী বেড়েছে পাঁচগুণ। বিশেষজ্ঞদের এমন পর্যালোচনা আমলে নিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ের চূড়ার দিকে ধেয়ে চলার এ সময়টায় সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

উপরোক্ত পরিস্থিতিতে আরেকটি বিষয় খেয়াল করা দরকার যে, মহামারী বিস্তারের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ অঞ্চলের পরিস্থিতি ভয়ংকর আর দেশের অন্যান্য এলাকার পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঢাকার বাইরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে হু হু করে। দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনার অতিসংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ধরন। এপ্রিল-মে মাসে ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশ জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েকগুণ বেড়ে এখন দেশের অধিকাংশ এলাকাই করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্চ থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে বিধিনিষেধ ও ‘লকডাউন’ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সংক্রমণ। এ পরিস্থিতিতে ‘লকডাউনের’ খবরে গত কয়েক দিন ধরে মানুষ যেভাবে ঢাকা ছেড়েছে বা বিভাগীয় শহর থেকে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব মানুষ গ্রামে ফিরে পরিবার ও হাটবাজারে অবাধে ঘুরছে এবং সবার সঙ্গে মিশছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। ফলে রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় বড় শহরগুলোর পাশাপাশি সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়েও বিধিনিষেধ পরিপালনে কঠোর হওয়া দরকার। একই সঙ্গে বিধিনিষেধ চলাকালে নিম্ন আয়ের মানুষদের সুরক্ষা, এ সময়েও চালু রাখা শিল্পকারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ আসন্ন সন্নিকটে থাকায় ঈদ ঘিরে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও এখন থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।