নুরুর স্মার্ট কার্ড পাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা
যুগান্তর |
মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদ (৩৪) স্মার্ট কার্ড পেয়েছে। চট্টগ্রামের ঠিকানায় তাকে স্মার্ট কার্ড পাইয়ে দিতে নির্বাচন অফিসের একটি সিন্ডিকেট সহযোগিতা করেছে। তাকে স্মার্ট কার্ড দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল।
৩১ আগস্ট টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া পাহাড়ি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নুরু নিহত হয়। এ সময় তার স্মার্ট কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। টেকনাফের যুবলীগ নেতা ফারুক হত্যার প্রধান আসামি ছিল নুরু।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে নুরুর সংগ্রহ করা স্মার্ট কার্ডের তথ্য অনুযায়ী তার নাম নুর আলম। এ নামে সে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করে। এতে তার পিতার নাম কালা মিয়া, মায়ের নাম সরু বেগম। জন্ম তারিখ ২৫ নভেম্বর ১৯৮৩। এনআইডি নম্বর ৬০০৪৫৮৯৯৬৩। শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণি, ভোটার এলাকা বার্মা কলোনি (১৭২২)। স্থায়ী ঠিকানা পশ্চিম ষোলশহর পার্ট-২, হিলভিউ রোড, ৪২১১ পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। নুরুর স্মার্ট কার্ড নিয়ে সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের তিন সদস্যের তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ। অন্য সদস্যরা হলেন- উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ রোডে বার্মা কলোনি তারা পরিদর্শন করেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তারা কথা বলেন।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কোনো ফাইল দেখাতে পারেনি। নুরুর স্মার্ট কার্ড পাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। তারা বলেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় নুরু জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ছবি তোলেন। সে আঙ্গুলের ছাপ দেয়। জন্মনিবন্ধনে সে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নাম ব্যবহার করে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটির ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীর কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি। বার্মা কলোনিতে এ নামে কোনো ভোটার হয়নি বলে কাউন্সিলর অফিস থেকে জানানো হয়।
কাউন্সিলর মোবারক আলী যুগান্তরকে জানান, দুদক কর্মকর্তাদের সব কিছু জানিয়েছি। আমরা নুরকে কোনো প্রত্যয়ন বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়নি। নূরের জন্ম নিবন্ধনে কোড উল্লেখ আছে ০৩। কিন্তু আমাদের জন্ম নিবন্ধন কোড ০৭। আমাদের থানা কোড ৫৭। আর থানা কোড দেখানো হয়েছে ৫২। কাউন্সিলর অফিস থেকে নুরু কোনো ডকুমেন্ট বা প্রত্যয়ন নেয়নি।
দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ যুগান্তরকে বলেন, কিছু জায়গা পরিদর্শন করেছি। জেলা নির্বাচনী অফিসের কর্মকর্তারা নূরের স্মার্ট কার্ড পাওয়ার বিষয়ে কোনো ফাইল দেখাতে পারেননি। তবে এ নির্বাচন অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।