জহির উদ্দিন বাবর : পবিত্র রমজান মুমিনের অনুশীলনের মাস। এই মাসের প্রধান শিক্ষা সংযম। আর এই সংযম নিছক না খাওয়া কিংবা জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকাই নয়। একজন রোজাদারের প্রতিটি কাজে-কর্মে, প্রতিটি আচার-আচরণে সংযমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। মার্জিত আচরণের মাধ্যমে রোজাদার তার রোজাকে পূর্ণতা দিতে পারেন। এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াবই কয়েক গুণ বেশি। এমনকি মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ এবং হাসিমুখে কথা বলার দ্বারাও রমজানের বিশেষ সওয়াব লাভ হবে।
উঁচু-নিচু, সাদা-কালো সবার সঙ্গে সুন্দর ও শোভনীয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাকেও গুরুত্ব দিতে বলেছেন নবী করিম (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘ভালো কাজের ছোট অংশকেও অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাতের মাধ্যমে হয়।’ -রিয়াজুস সালেহিন : ৬৯৪
মুমিনের এ কাজটিকে হাদিসের ভাষায় সদকা বলা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে প্রতিটি আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে সদাচরণ করলে সেটার সওয়াবও মিলবে অন্য মাসের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়া রমজান হচ্ছে সহানুভূতির মাস। পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করার মাস। রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করা, কথায় কথায় রাগ করা রোজার আদবের পরিপন্থী। শরিয়তের দৃষ্টিতে এর দ্বারা রোজা না ভাঙলেও এর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। রোজার যে আধ্যাত্মিক শক্তি সেটা খর্ব হয়।
অনেককে দেখা যায়, রমজানে ক্ষুধার তাড়নায় মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। মানুষের সঙ্গে রুক্ষ আচরণ করেন। এটি রমজানের শিষ্টাচারবহির্ভূত। কোনোক্রমেই এটা করা সমীচীন নয়। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগবে, পিপাসা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। রমজানের সুফল পেতে হলে ঝগড়াঝাঁটি, গিবত, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা ইত্যাদিও বর্জনীয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে মর্যাদাসিক্ত করেন। তখন সে নিজের চোখে তুচ্ছ হলেও মানুষের চোখে অনেক বড় বিবেচিত হয়।’ -বায়হাকি : ৭৭৯০
অন্য হাদিসে আছে, ‘অনেক রোজা পালনকারী রোজা দ্বারা উপোস থাকা ছাড়া আর কিছু পায় না। অনেক রাত জেগে নামাজ আদায়কারী রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু লাভ করে না।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৯০
রোজা রেখে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যাতে রোজা হালকা হয়ে যায়। পবিত্র এই ইবাদতে কোনো খুঁত সৃষ্টি করা যাবে না। মানুষের সঙ্গে সদাচার শুধু রমজানে নয়, রাসুল (সা.)-এর শাশ্বত ও চিরন্তন সুন্নত।
রমজানে যেকোনো খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং সুন্দর আচরণসহ সব নেক আমলের প্রতি সচেষ্ট হওয়া মুমিনের গুণ। কেউ ভুল করলেও সুন্দর কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে বলা নবীজির শিক্ষা। ছোট্ট এই জীবনে মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার কোনো বিকল্প নেই। রাসুল (সা.) সবার সঙ্গে অত্যন্ত কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদিসে আছে, ‘আল্লাহ কোমলতা পছন্দ করেন। আল্লাহ কোমলতার বদলা হিসেবে যা দেন, কঠোরতার কারণে তা দেন না।’ -সহিহ বোখারি : ২৫৯৩
অপরের কল্যাণ প্রত্যাশা একজন মুসলিমের অন্যতম গুণ। পরামর্শ, উপদেশ, নির্দেশনাসহ অসংখ্য উপায়ে মানুষের কল্যাণ কামনা করা যায়। প্রিয়নবী (সা.) সব সময় সুন্দর আচরণ করতেন। কখনো রূঢ় হতেন না। সেটা অন্য সময় তো হওয়া যাবেই না, রমজানে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখক : আলেম ও ধর্মীয় নিবন্ধকার।
