রামু-মরিচ্যা সড়ক সম্প্রসারণ : ২৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের নাম রামু-মরিচ্যা সড়ক। যেটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। সম্প্রতি সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণাল এই সড়কটির সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সড়কের সম্প্রসারণের কাজে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সড়কের দু’পাশের বাসিন্দারা সড়কের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সড়ক বিভাগ বলেছেন সড়কের কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে, এখনো অনিয়ম বলার সময় আসেনি।

কক্সবাজার জেলার প্রাচীনতম সড়কগুলোর মধ্যে রামু-মরিচ্যা সড়ক অন্যতম। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই সড়কটি সংস্কার কিংবা সম্প্রসারণের দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই সড়কটির গুরুত্ব অনেক। এই সড়কের দুপাশে রয়েছে রামু সেনানিবাস, বিজিবির রামু সেক্টর হেডকোয়ার্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দেশের সবচেয়ে বড়ো নারিকেল বীজ বাগান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তিন হাজার বছর আগের পুরনো একটি তীর্থ স্থান সহ বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থান।

এসব বিবেচনায় সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই সড়কটির সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটিকে প্রস্থ ৯ ফুট থেকে ৩৬ ফুটে উন্নীত করনসহ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ২৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে সড়কের কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ শুরু করতেই অনিয়মের অভিযোগ তুলে সড়কের দু’পাশের বাসিন্দারা। তারা অভিযোগ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিডিউল অনুযায়ী সড়কের কাজ করছে না। সড়কের মাটি খুড়ে গ্রাউন্ড লেবেলে সাববেইজ করার সময় বালি দিয়েই কাজ করছে। সড়কের সাববেইজ থেকে উপরিভাগ পর্যন্ত কাজে বালি, কংকর, খোয়া এবং খোয়া মিশ্রিত বালির মিশ্রণ যথাযথ কারা হচ্ছে না। যথাযথ কম্পেক্টও করা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এইভাবে সড়কটি নির্মিত হলে তা টেকসই হওয়া নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা। এসব অনিয়মের অভিযোগ উঠায় স¤প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সড়কের কাজ পরিদর্শন করেছেন।

মরিচ্যা চেকপোস্ট এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘রামু-মরিচ্যা সড়কটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সড়ককে মহাসড়কে রূপান্তর করার জন্য কাজ শুরু করেছে। কিন্তু, সড়কে সিডিউল অনুযায়ী কোন কাজ হচ্ছে না।’

রামু দারিয়ারদীঘি এলাকার বাসিন্দা মোঃ ফারুক হোসেন জানান, ‘সড়কের কাজ শুরু থেকে প্রতিদিন চুরি করে রাস্তার বালি ও কংক্রিট মিশ্রণ করে পর্যাপ্ত পরিমাণ সড়কে দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলকে জানিয়েছি। সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল সরেজমিন পরিদর্শন কওে সত্যতা পেয়েছেন। একারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে উক্ত সড়কের কাজ সড়ক বিভাগের কোন ধরণের তদারকি ছাড়াও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

একই এলাকার আবুল কালাম জানান, ‘সড়ক বিভাগ থেকে মাঝেমধ্যে কোন কর্মকর্তা কাজ পরিদর্শনে আসলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমাঝোতা করে কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি রহস্যজনক। কারণ প্রকাশ্যে উক্ত সড়কে কারচুপি হচ্ছে। যে পরিমাণ বালি সংক্রিটের সাথে মেশানোর কথা তা সে পরিমাণ দেয়া হচ্ছে না।’

এদিকে সড়কের নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন কালে সংসদ সদস্য সড়কের কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সরাসরি কোন মন্তব্য করেনি।

তবে সড়কের সম্প্রসারণ কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা সড়কের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন তালুকদার জানান, ‘সড়কের কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সরকারের উর্ধতন প্রকৌশলীরা কাজে যথাযথ তদারকি করছে। স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেসী লোক সড়কের সম্প্রসারণের কাজ শুরুর পর নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, ‘রামু-মরিচ্যা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। এ পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ করার মতো সময় এখনো আসেনি। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা প্রতিদিনই কাজ পরিদর্শন করছে। সড়ক নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম দেখা দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই সড়কটি এই অঞ্চলের জন্য স্ট্যাটেজিক্যালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কটি প্রস্থে ৯ ফুট থেকে ৩৬ ফুটে উন্নীত করা হবে। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি নির্মিত হলে এটি হবে প্রস্থে এই অঞ্চলের বড়ো সড়ক। প্রস্থাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সাথে এটির সংযোগ ঘটবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সাথে টেকনাফের সরাসরি যোগাযোগে ১৭ কিলোমিটার পথ কমে আসবে।