রাত পোহালেই চকরিয়ায় ভোট উৎসব : কোন কর্মকর্তা অনিয়মে জড়ালে গ্রেফতার আর কেউ অন্যায়ভাবে ব্যালটে হাত দিলে গুলি-পুলিশ সুপার

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৬ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া : নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে রাত পোহালেই সোমবার ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা জুড়ে জনগনের মাঝে ভোট উৎসব শুরু হচ্ছে। এদিকে প্রতিদ্বন্দি এক প্রার্থী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমকে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্যরা টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে আইন-শৃংখলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নির্বাচন চলাকালীন কোন কর্মকর্তা অনিয়মে জড়ালে সাথে সাথে গ্রেফতার করা হবে আর কেউ অন্যায়ভাবে অন্য ভোটারের ব্যালটে হাত দিলে প্রয়োজনে গুলি করা হবে বলে জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন কড়া হুশিয়ারী প্রদান করেছেন।

আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি চেয়ারম্যান পদে চারজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজনসহ মোট ১২ প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তফসিল ঘোষনার পর থেকে উত্তেজনা ছিল বেশি। তবে গতকাল থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহনের পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
এদিকে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সার্বিক প্র¯‘তি চুড়ান্ত করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কর্মকর্তারা বলছেন, এই নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৫৫ জন। আর উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯৯টি কেন্দ্রের ৬৩৪টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, শতভাগ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে এবারের নির্বাচনে ১৮টি ইউনিয়নের জন্য একজন করে এবং পৌরসভার জন্য দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে ১জন।’
তিনি বলেন, নির্বাচনে আইন-শৃক্সক্ষলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য ইতোমধ্যে চকরিয়ায় অবস্থাান করছে। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আরো বাড়তে পারে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি প্রতিকেন্দ্রে অন্তত ১০ আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে নিরাপত্তায়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘নির্বাচনটি হবে শতভাগ সুষ্ঠু। তাই সকল প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোগগ্রহণ কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর পরও যদি কোন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা অনিয়ম করার চেষ্টা করেন তাহলে সাথে সাথে গ্রেপ্তার করা হবে এবং ভোটগ্রহণ স্থাগিত থাকবে। কোন অবস্থাাতেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে যা যা করার দরকার তার সবপ্র¯‘তি চুড়ান্ত করা হয়েছে।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে কোন অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। ব্যালটে কেউ হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক গুলি করা হবে। এক্ষেত্রে সে কে তা দেখা হবে না। নির্বাচনে পুলিশের প্রায় ১১০০ সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মেজর মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটারদের যাতায়াত নির্বিঘœ করাসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের দুই প্লাটুন সদস্য নিয়োজিত থাকবে।’
নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য করতে যা যা করার দরকার তার সবপ্রস্তুতিই চুড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এর পরও কোন কেন্দ্রে কেউ প্রভাব বিস্তার বা অন্য কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ওই কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে। সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন গতকাল রোববার দুপুরে চকরিয়া থানাচত্বরে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। ওইসময় তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে কোন অবস্থাাতেই ভোট কারচুপির সুযোগ দেওয়া হবে না কাউকে। কেউ সেধরণের কোন কাজ করার চেষ্ঠা করলে এক্ষেত্রে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর নজরদারির মাধ্যমে প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রভাব দেখাতে জড়িত যত বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মাস্তান হউক না কেন কাউকে প্রশয় দেয়া যাবেনা। কেউ যদি কেন্দ্র দখল বা ব্যালটে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে তাৎক্ষনিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে গুলি করবে।