রমজান মাসের বিশেষ পুরস্কার

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

নূর মুহাম্মদ : বছর ঘুরে আবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস রমজান। রমজান মাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও পরম আকাক্সিক্ষত। এই মাস প্রতি বছর বিশ্বের মুসলমানদের দেয় বিশেষ কিছু আমলের সুযোগ এবং বিনিময়ে দেয় বিশেষ পুরস্কার। সার্বিক দিক দিয়ে রমজান আমাদের জন্য কল্যাণকর। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

তাকওয়া অর্জন : রমজান হলো তাকওয়া চর্চার সর্বোত্তম সময়। রোজা পালনের উদ্দেশই হলো তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া বলতে বুঝায় আল্লাহভীতি। আল্লাহতায়ালা বলনে, ‘হে মুমনিরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ -সুরা বাকারা ১৮৩

রাইয়ান নামক দরজা : জান্নাতের একটি দরজার নাম রাইয়ান। যে দরজা দিয়ে কেবলমাত্র রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করতে পারবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন কেবল রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ -সহিহ বুখারি

গুনাহ থেকে মুক্তি : রমজানের রোজা রাখার দ্বারা রোজা পালনকারী সব সগিরা গুনাহ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার বিগত জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ -সহিহ বুখারি

কোরআন নাজিলের মাস : পবিত্র রমজান মাসে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের অবতরণ শুরু হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ -সুরা বাকারা ১৮৫

আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভ : রোজার প্রতিদান আল্লাহতায়ালা নিজে দেবেন বলে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে। হাদিসে এসেছে, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্যই রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (সহিহ বুখারি) কোনো কোনো মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসের অর্থ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ নিজেই তার প্রতিদান হয়ে যাবেন।’

প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হবে : একটি দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ ইবাদত আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ ইবাদত আদায় করল।’-সহিহ ইবনে খুজাইমা

জাহান্নাম থেকে মুক্তি : রমজান আমাদের কাছে আগমন করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখবে, মহান আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’(সহিহ বুখারি) হজরত রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ -মুসনাদে আহমদ

শয়তানকে বন্দি রাখা হয় : রমজান মাসে শয়তান বন্দি থাকে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’-সহিহ বুখারি

অন্যকে ইফতার করানোর প্রতিদান : কোনো রোজা পালনকারীকে ইফতার করানোতেও আছে অনেক প্রতিদান। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমান নেকি পাবে। আর তাতে রোজাদারের নেকি থেকে কিছুই কমানো হবে না।’ -তিরমিজি

রাতের নামাজের পুরস্কার : হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়াম করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বুখারি

রোজা সুপারিশ করবে : কিয়ামতের দিন রোজা বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে দিনে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। হজরত রাসুল (সা.) বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ -মুসনাদে আহমাদ

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত্রি : রমজানে এমন একটি রাত্রি আছে, যাকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কদরের রাত হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ -(সুরা কদর, আয়াত ৩) হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বুখারি

ইতিকাফকারীর পুরস্কার : রমজান মাসে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হজরত রাসুল (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘ইতিকাফকারী ঐ ব্যক্তির মতো যে সৎকাজ করে এবং যাবতীয় গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। আর তার জন্য নেকি জারি রাখা হয়।’ -ইবনে মাজাহ

রমজানে ওমরাহ পালনের প্রতিদান : রমজানে ওমরাহ আদায় সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’ -সহিহ বুখারি

পবিত্র রমজান মাস প্রতি বছর আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে। তা হলো তাকওয়া অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ। এটাই হলো উভয় জগতের সফলতা এবং মহা পুরস্কার।
https://www.deshrupantor.com/495552