যে দেশে ফেসবুক ব্যবহার অপরাধ

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

খালিদ আহমেদ রাজা : ফেসবুক হলো মেটা প্ল্যাটফর্মসের মালিকানাধীন বিশ্ব সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট, যা ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেসবুকে বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায়। সব থেকে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি ফেসবুক। প্রায় সবারই দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই সামাজিক মাধ্যমটি। বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত সবকিছুর ওপরই প্রভাব রয়েছে এর। কিন্তু আধুনিক এই মুক্ত বিশ্বে অবাক করা তথ্য হলেও এমনও কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে ফেসবুক নিষিদ্ধ। এমনকি সেসব দেশের সাধারণ মানুষ চাইলেও গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারে না।

চীন : জিনজিয়াং প্রদেশে মারাত্মক দাঙ্গার পর কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে চীনে ফেসবুক পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মেটার মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ ও এর ফটো এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামও নিষিদ্ধ এ দেশে।

ইরান : ২০০৯ সালে দেশটির নির্বাচনে বিতর্ক উঠলে গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে ইরানে ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও কিছু ব্যবহারকারী ভিপিএন ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাক্সেস করে থাকেন। তবে সে দেশের সরকার ভিপিএন-এর ব্যবহারও আইনত অপরাধ বলে ঘোষণা করে। লুকিয়ে কেউ পশ্চিমা এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ধরা পড়লে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

উত্তর কোরিয়া : বিশ্বের অন্যতম রক্ষণশীল দেশ উত্তর কোরিয়ায়ও ফেসবুক ব্যবহার করা যায় না। ২০১৬ সালে ওই দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, এই নিষিদ্ধকরণের পরও যদি কেউ অবৈধ উপায় ফেসবুক অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।

কিউবা : কিউবায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু এটি অ্যাক্সেস করা খুব কঠিন। শুধু রাজনীতিবিদ, কিছু সাংবাদিক এবং মেডিকেল স্টুডেন্টরা তাদের বাড়িতে আইনত ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারেন। বাকি সবার জন্য আইনিভাবে সংযোগ করার একমাত্র উপায় হলো ইন্টারনেট ক্যাফে। এখানে আর একটা বিষয় হলো কিউবার গড় আয় ২০ মার্কিন ডলার। আর ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে প্রতি ঘণ্টায় ৬ মার্কিন ডলার থেকে ১০ মার্কিন ডলারের খরচ হয়। ফলে এত খরচ দিয়ে বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ভিয়েতনাম : ২০০৯ সালে ভিয়েতনামে সরকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক। পরবর্তী সময় বেশ কয়েকবার সরকারবিরোধী কর্মকান্ডের আশঙ্কায় বন্ধ করা হয় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২০১৩ সালে ভিয়েতনামের সরকার ‘ডিক্রি ৭২’ জারি করে যেখানে বলা হয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সরকারবিরোধী কোনো খবরের লিংক প্রকাশ করা যাবে না এবং প্রকাশ করা হলে উচ্চ জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়।

তুর্কমেনিস্তান : প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বাধীন রাষ্ট্র মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান সরকারও ফেসবুক নিষিদ্ধ করেছে। ফেসবুক ব্লক করার পাশাপাশি তুর্কমেনিস্তানে হোম ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সাইন আপ করার সময় পবিত্র কোরআনের শপথ নিতে বলা হয়। শপথ করানো হয় যে, তারা ভিপিএন অ্যাক্সেস করবে না। এ সময় শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ সাইটগুলোতে অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে হয়।