মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ :
ট্রানজিট পয়েন্ট-সাবরাং ও টেকনাফ সৈকত মৎস্য ঘাট দিয়ে ইয়াবার বহর আসে ফিশিং বোটে। নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা মরণ নেশা ইয়াবা ঠেকাতে সরকার জিরো টলারেন্স। এ জন্য সরকার বিকল্প হিসাবে নাফ নদীতে রাত্রে জেলেদের মাছধরা নিশিদ্ধ ঘোষনা করে ইয়াবা প্রতিরোধে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এতে পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পড়ে যায় বেকায়দায়। বিকল্প পথে ওরা ইয়াবা পাচারে নিরাপদ রুট হিসাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু-দেশের সমূদ্র পথকে বেঁচে নিয়েছে। দেশে ইয়াবার যেহেতু প্রচুর চাহিদা রয়েছে সেহেতু ইয়াবার চাহিদা মেটাতে স্থল ও জলপথ দিয়ে সমানতালে ইয়াবার চালান দেশে ঢুকাতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে দেশে মাদকের ভয়াবহতা উপলব্দি করে, শেষ পর্যন্ত নাফ নদীতে জেলেদের রাত্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারী করে এবং তারই প্রেক্ষিতে নাফ নদীতে ইয়াবা পাচার কড়াকড়ী আরোপ দেখে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন সাগর পথ দিয়ে ইয়াবার চালান ঢুকার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখ্য, গোয়েন্দা ও মিডিয়ার তথ্যানুযায়ী দুদেশের নাফ নদীর জিরোপয়েন্ট দিয়ে জেলেদের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান মৎস্যের আড়ালে ছদ্মবেশে চলে আসে। যার কারণে ইয়াবা ও মাদকের ভয়াবহতা পেলে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এর পর থেকে নাফ নদী দিয়ে ঢালাও ভাবে ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পড়ে যায় বেকায়দায়। বিকল্প পথ হিসাবে সমূদ্র গভীর জলসীমার এবং টেকনাফের সাবরাং এবং টেকনাফ ও বাহারছড়া সমূদ্র উপকূলের মৎস্য ঘাটকে ইয়াবা ও স্বর্ণ ঢুকাতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিরাপদ মনে করছেন। তাই সমূদ্র উপকূলের ১২টি মৎস্যঘাট দিয়ে ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান ঢুকছে। যাহা অতীতে বিজিবি ও কোষ্টগার্ড বাহিনীর হাতে প্রায় ইয়াবার চালান জব্দ হয়েছিল।
টেকনাফ সমূদ্র উপকূলে যে ক’টি মৎস্য ঘাট দিয়ে ইয়াবা ঢুকে তার মধ্যে সাবরাং কাটাবনিয়া, খুরেরমূখ, বাহারছড়া, টেকনাফের মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতলী, লেঙ্গুরবিল, দক্ষিণলম্বরী, উত্তর লম্বরী, মিটাপানিরছড়া, হাবিরছড়া, রাজারছড়া ও বাহারছড়া শামলাপুর মৎস্য ঘাট উল্লেখ যোগ্য। এসব মৎস্য ঘাটের জেলেরা প্রায় মিয়ানমারের জলসীমানা বরাবর মৎস্য শিকার করে। কেননা ওরা মৎস্য আহরনের নামে ইয়াবা আহরনে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে অর্থের লোভে ইয়াবা পাচারে বেশী আকৃষ্ট হয়। এর নেপথ্যে রয়েছে দুদেশের সীমান্ত পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য গডফাদারেরা। অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মোবাইল ফোন এবং মিয়ানমারের মোবাইল ফোনে সীম ব্যবহারের মাধ্যমে ইয়াবার চালান ঐসব মৎস্য ঘাট দিয়ে সহজে প্রবেশ করে। একাদিক সূত্র অনুযায়ী ইয়াবার বিপরীত বেশীরভাগ অর্থ মিয়ানমারে পাচার হয়ে থাকে হুন্ডির মাধ্যমে। এ কারণে টেকনাফ সীমান্তে বেঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে হুন্ডি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ইয়াবার অর্থ লেনদেন হয় বেশীরভাগ বিকাশ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রন করতে পারলে ইয়াবা বা মাদকদ্রব্য অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে সীমান্তের সচেতন মহলের অভিমত। ইয়াবা ঠেকাতে নাফ নদীতে রাত্রে জেলেদের মৎস্য আইরন নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পর স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকেরা ইয়াবা/মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ২৯ জুলাই, টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ সন্ধায় হ্নীলা ষ্টেশান থেকে তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী স্থানীয় মেম্বার জামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্ত অনুযায়ী হ্নীলা আলীখালী বাড়ী থেকে ২টি অস্ত্র ও ১৪ হাজার ইয়াবা জব্দ করে। এর পর থেকে তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে আতœগোপনে রয়েছে। সম্প্রতি ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রনহীন সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন পেশাজীবি লোকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ইয়াবা ব্যবসার সাথে প্রশাসনের কতিপয় লোকজন জড়িত থাকার কারণে ইয়াবা ব্যবসা ও পাচার রোধ করা যাচ্ছেনা। শুধুমাত্র এককভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে দুষারোপ করলে চলবেনা। এর সাথে প্রশাসন অনেকাংশে দায়ী। অনেকের মতে প্রশাসন শক্ত হলে একটি ইয়াবা আসতে পারেনা। অভিযোগ রয়েছে সাবরাং খুরের মুখ, কাটাবনিয়া ও মুন্ডার ডেইল মৎস্য ঘাট দিয়ে প্রশাসনের চোখের সামনে বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান নৌকা থেকে খালাস হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ও’সি) মোঃ মাঈন উদ্দিন খান বলেন, একমাত্র ইয়াবার কারণে টেকনাফে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশকে এ নিয়ে সদাসর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়।