মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬০ টাকার বেশি নয়

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago
টেকনাফ স্থল বন্দরে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ট্রলার থেকে খালাসের দৃশ্য। সম্প্রতি তোলা ছবি

টেকনাফ টুডে ডেস্ক |
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারখ্যাত খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামে কারসাজিকারী আড়তদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ৪২ টাকা দামে কেনা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারেই ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রামীণ বাণিজ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার পরিচালিত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সেলিম হোসেন। অংশ নেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক শাহিদা সুলতানা, মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

কর্মকর্তারা আড়ত থেকে কেনা পেঁয়াজের একটি ট্রাকের চালান পরখ করে দেখেন। ট্রাকের পেঁয়াজ কেনা দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আড়তদারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে- মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকার বেশি কোনো অবস্থাতেই বিক্রি করা যাবে না।

রোববারও চট্টগ্রামের বৃহৎ এই পাইকারি বাজারে ভারতেরটি বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি। মিয়ানমারেরটি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা এবং মিসরেরটি কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৮ টাকা বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে কেজিতে মানভেদে আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়।

সূত্র জানায়, মূল্য তালিকা নিয়েও কারসাজি করছেন খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও বিক্রেতারা। অভিযানে খাতুনগঞ্জের প্রায় শতাধিক আড়ত পরিদর্শন করা হয়। দেখা যায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্তে¡ও আমদানিকারক-কমিশন এজেন্ট ও আড়তদাররা দাম ঊর্ধ্বমুখী করে রেখেছেন। মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ ৪২ টাকা দরে আমদানি হয়েছে, তা ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ মূল্যতালিকায় মিয়ানমারেরটির দাম ৬০-৬৫ টাকা লেখা রয়েছে। রোববার জেলা প্রশাসনের অভিযান টিমও এই বাজারে অভিযান চালিয়ে একই চিত্র দেখতে পায়।

বেশ কয়েকটি আড়তের বিক্রয় রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখা যায়, মিয়ানমারেরটি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ সময় চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানান, দাউদকান্দিগামী একটি ট্রাকের পেঁয়াজের চালান পরীক্ষা করে দেখতে পাই ৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট আড়তদারকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। আমদানিকারক পর্যায়ে কেউ মূল্য সন্ত্রাস করলে, কেউ দাম চাপিয়ে দিলে জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসারকে জানানোর জন্য বলেছি। পাইকারিতে মিয়ানমারেরটি ৫৫-৬০ টাকার বেশি হলে জরিমানা-জেল হবে বলেও হুশিয়ার করেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সেলিম হোসেন বাজার পরিদর্শন শেষে সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ টাকার বেশি বিক্রির সুযোগ নেই। কারণ এই দামে বিক্রি করলে খরচ ও লাভের টাকা উঠে যাওয়ার কথা। খুচরা বাজারে এর দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পাইকারি বাজারে কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ জেলা প্রশাসনের : চট্টগ্রাম অঞ্চলের পেঁয়াজের দামের কারসাজিতে জড়িত ১৬ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এ তালিকা পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। জেলা প্রশাসনের অনুসন্ধানে যে ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে এর মধ্যে ১২ জনই টেকনাফ এলাকার। সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে টেকনাফ এলাকার আমদানিকারক সজিব, টেকনাফের মম (মগ), ফোরকান (পেঁয়াজ বিক্রেতা), আলীফ এন্টারপ্রাইজ, আমদানিকারক জহির, আমদানিকারক সাদ্দাম, সিএন্ডএফ কাদের, পেঁয়াজের দালাল শফি, গফুর (পেঁয়াজ বিক্রেতা), মিন্টু (পেঁয়াজ বিক্রেতা), খালেক (বিক্রেতা), টিপু (বিক্রেতা), খাতুনগঞ্জের আজমির ভাণ্ডার, নগরীর স্টেশন রোড এলাকার ‘মেসার্স সৌরভ ব্রাদার্স’, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ‘এ হোসেন ব্রাদার্স’ ও খাতুনগঞ্জের ‘মেসার্স আল­াহর দান স্টোর।