ভোটার হতে মরিয়া রোহিঙ্গা কমিয়ার পরিবার

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আসন্ন ভোটার হালনাগাদে পরিবারের সব সদস্যদের ভোটার করাতে বিভিন্ন জায়গায় তদবির ও ধর্ণা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রোহিঙ্গা হোসেন আহমদ (প্রকাশ কমিয়া)র বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় রোহিঙ্গা কমিয়া ১৯৯৮ সালে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে একটি ছোট ইলেকট্রনিক্সের দোকান দেয়। পরে সেখান থেকে আবার জীবিকার তাগিদে নৌকা যুগে মালিশিয়াই গমন করে। সেখানে কমিয়া বেশ কয়েক বছর অবস্থান করার পর ২০০৫ সালের দিকে বিভিন্ন কায়দা ব্যবহার করে বাংলাদেশে ফিরে আসে। তার মধ্যে এহসান নামক তার এক সন্তানকে একই কায়দায় মালিশিয়া নিয়ে যায় রোহিঙ্গা কমিয়া। জানা যায় ২০০৮ সালে তৎকালীন নির্বাচনকালীন তত্তাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ফিঙ্গার যুক্ত এন আইডি কার্ড করার প্রকল্প হাতে নেয়। ঠিক সেই সময়ে রোহিঙ্গা কমিয়ার পর্যাপ্ত বয়স থাকা সত্তেও ভোটার হতে পারেনি। কেন পারেনি এমন প্রশ্নের জবারে রোহিঙ্গা কমিয়া জানান তার বাবার সাথে তার অনেক বছর যোগাযোগ ছিলনা। এমনকি তার বাবা কোথাই বা তার দাদার বাড়ি কোথাই সে জানত না। পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে তার বাবা আবদুল করিম। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের হাতিয়ার ঘোনার বাসিন্দা। তখন বাবা পূত্র পরিচয় হয়ে ২০১২ সালে ভোটার হালনাগাদের সময় অভিযুক্ত রোহিঙ্গা কমিয়া ভোটার হয় বলে জানান।

এদিকে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় কমিয়ার বাবা পরিচয়দানকারী আবদুল করিম (৬৫) সঙ্গে। সে জানাই অভিযুক্ত কমিয়ার মাতার বাবার বাড়ি কক্সবাজারের দুলাহাজারার আরগাজা এলাকায়। যা বর্তমানে কমিয়া সেখানে আসা যাওয়া করে বলে তার দাবী। অর্থাৎ তার মাধ্যমে কমিয়া তার নানার বাড়ি ছিনতে পেরেছে। আবদুল করিমের মতে কমিয়ার মাতা সহ তার তিন বউ। তার মধ্যে কমিয়া মাতা সবার বড়। কমিয়া জন্ম হওয়ার পর তার মাতা মারা যায়। অর্থাৎ কমিয়া এক মায়ের একটি সন্তান। তাহলে কমিয়া ছোট বেলায় কার কাছে বড় হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে কমিয়া ও তার বাবা কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। এদিকে কমিয়া সঠিক বাংলাদেশি কিনা এমন প্রমান দেখাতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কতৃক জারিকৃত ভোটার হতে যে কাগজ পত্র গুলো লাগবে তা দেখাতে বললে দীর্ঘ দুই সাপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন সমস্যার বাহানা দিয়ে সে কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে কৌশলে এই প্রতিবেদক তার এন আইডি কার্ডসহ তার পরিবারে ৬ সন্তানের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক চার সন্তানকে ভোটার করাতে সংগ্রকৃত বিভিন্ন কাগজ পত্র দেখতে সক্ষম হয়। তবে এই কাগজ গুলো সে বাংলাদেশি হিসেবে প্রমান করতে এই প্রতিবেদক কে ভালভাবে দেখাবে বললেও বার বার সময়ের বাহানা দিয়ে অদৃশ্য কারণে তা দেখায়নি। উল্টো বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে এই প্রতিবেদক কে ফোন করিয়ে অনুরোধ করায় যে যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো রির্পোট বা সংবাদ প্রকাশ করা না হয়। জানা যায় কমিয়ার দুই মেয়েকে বাংলাদেশি দুইজন নাগরিকের সাথে বিবাহ দিয়েছে। আর মেয়ের বিবাহতে সঠিক ডকুমেন্ট দিয়ে কাবিন নামা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তার দাবী দুই মেয়ের কাবিন নামা হয়েছে। তবে কোন কাজী কাবিন করিয়েছে এমন প্রশ্নেের জবাবে কমিয়া কথাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং কয়েকবার বলার সত্তেও কোনো উত্তর দেননি।
অন্যদিকে তার দুই ছেলের বিবাহতে কাবিন নামা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরও আগের মত এগিয়ে যান কমিয়া।

এদিকে শামলাপুর গ্রামের অনেক বাসিন্দা জানান কমিয়া একজন খাঁটি রোহিঙ্গা। সে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে বিভিন্ন কায়দা ব্যবহার করে ভোটার হয়েছে। অথচ সে ভোটার হলে তার স্ত্রীও ভোটার হওয়ার কথা। অথচ সে তার স্ত্রীর আইডি কার্ড পর্যন্ত দেখাতে পারবেনা।

অন্যদিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান ১৯৯৮ সালে রোহিঙ্গা কমিয়া প্রথম বাংলাদেশে আসার পর রাতে আমার বাড়ির উঠানে আশ্রয় নেয়। রাতে অচেনা ব্যক্তি দেখে এখানে কেন আসছ জীজ্ঞেস করলে কমিয়া বলে যে মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে অনেক ক্লান্ত। তাই আপনার বাড়ির উঠানে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। এই ব্যক্তি আরো বলেন এটা দুঃখজনক যে এই রকম একজন ব্যক্তি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের ভোটার হয়! প্রশাসন কতৃক সুষ্ট তদন্তদের মাধ্যমে সে যদি বাংলাদেশের আসল নাগরিক হয়ে থাকে তাহলে তাকে স্বাগতম,যদি না হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা সহ তার আইডি কার্ড বাতিল করা হোক। অভিযুক্ত কমিয়া এক সময় শামলাপুর এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করলেও বর্তমানে সে বনবিভাগের জায়গা দখল করে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান দায়িত্বরত এক জনপ্রতিনিধির কাছে জানতে চাইলে তিনি অনেক খোঁজ খবর নিয়ে জানান কমিয়া মুলত আবদুল করিমের পালক পূত্র। কমিয়া ছোট থাকতে তার মা মারা গেছে। তার আসল বাবা ছিলেন ওলা মিয়া। তবে সে কোথাকার বাসিন্দা এলাকার কেউ জানেনা। কয়েক বছর হাতিয়ার ঘোনাতে বসবাস করার পর অনেক বছর হচ্ছে সে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে এবং তার কোনো বংশধরও এলাকায় পাওয়া যায়নি।