টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে ৫ জন দালালের নাম উল্লেখ করে ৬শ’ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেছে নির্বাচন কর্মকর্তা (ইসি)।
এই ৫ দালালও রোহিঙ্গা এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারেই বাস করছেন। মূলত এরাই মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় (এনআইডি) অন্তর্ভুক্ত করছিল।
ইসির অনুমোদনবিহীন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে চক্রটি রোহিঙ্গাদের ভোটার করে। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ইসির ডাটাবেজে যুক্ত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামে ইসির সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার অভিযোগে মামলায় গ্রেফতার ইসির অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনসহ ৩ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করে তাদের প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আসামি জয়নালকে ৩ দিন এবং বিজয় দাশ ও সীমা দাশকে এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ইসি বলছে, কক্সবাজার সদর উপজেলায়ই অন্তত ৬শ’ রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন অফিস। কক্সবাজারের বাকি ৭ উপজেলার নাগরিক তালিকাও যাচাই করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ধারণা, রোহিঙ্গারা চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে হাত করে জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্ত হচ্ছে।
ইতিমধ্যে সদর মডেল থানার মামলার এজাহারভুক্ত ৩ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরা হচ্ছেন- কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু (৪২), মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে ইয়াসিন (৩৭) ও টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আবুল হাশেমের ছেলে আবদুল্লাহ (৫৩)।
বাকি দুইজন হচ্ছেন- ওবায়দুল্লাহ (৩৭) এবং কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ি এলাকার মৃত ওলা মিয়ার ছেলে শামসুর রহমান (৫০)। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বাদী হয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। মামলায় এই ৫ জন রোহিঙ্গাকে ‘গডফাদার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিদের ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি নাগরিক তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি যাচাই করতে গিয়ে ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানান, ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ১৮/১৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযুক্তরা চট্টগ্রাম শহরের একটি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলছিলেন। গোপন সূত্রে জানতে পেরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করেন।
নির্বাচন অফিসের সার্ভারের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রেফতার রোহিঙ্গাদের তথ্য ইসির ভোটার নিবন্ধন তথ্যে থাকলেও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ভোটার নিবন্ধন ল্যাপটপ আইডির সঙ্গে তার মিল নেই।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, অবৈধ পন্থায় দেশের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছয় শতাধিক রোহিঙ্গা। মামলার তদন্ত চলছে। কীভাবে এসব রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর লাভলেনে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে প্রথমে ডবলমুরিং জোনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনকে আটক করেন নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিষটিও স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সহযোগী বিজয় দাশ ও তার বোন সীমাদাশকে ডেকে এনে আটক করা হয়। ল্যাপটপটি ছিল বিজয় দাশের কাছে। আটকের পর তাদের তিনজনকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।