ভারতের বোলারদের কাছে হেরে টাইগারদের বিদায়

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৬ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ২৮ রানে হেরে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ থেকে বিদায় নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। ভারতের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বলিংয়ের সামনে অসহায় ছিল টাইগাররা। শুধুমাত্র সাকিব আল হাসানের ৬৬ ও শেষ দিকে সাইফউদ্দিনের ৫১ রান ছাড়া আর কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের ব্যাট আজ তেমন কিছুই দিতে পারেনি দলকে। শেষের দিকে সাব্বির- সাইফউদ্দিনের জুটি কিছুটা জয়ের স্বপ্ন দেখালেও বুমরার বলে সাব্বিরের বোল্ড হওয়ার পর সেই জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এই জয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চারে নিজেদের অবস্থান পাকাপুক্ত করলো ভারত।

মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।

ইনিংসের শুরু থেকেই অনবদ্য ব্যাটিং করে যান রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। অবশ্য ১৮ রানেই ব্রেক থ্রু পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে গিয়েও ক্যাচটি মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৮ ও ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন ফিরে পান রোহিত শর্মা। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোহিতকে। ক্রমে আক্রমণাত্মকে হয়ে ওঠেন ভারতীয় এই ওপেনার। পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান সংগ্রহ করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। ১৭.২ ওভারের স্কোর বোর্ডে বিনা উইকেটে ১০০ রান সংগ্রহ করেন তারা। ২০ ওভারের ভারতের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১২২ রান।

উদ্বোধনী জুটিতে ক্যারিয়ারের ২৬তম এবং বিশ্বকাপের এক আসরে চতুর্থ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন রোহিত। শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করার পর বাংলাদেশের অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। তার আগে ৯২ বলে সাতটি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৪ রান করেন তিনি।

রোহিত শর্মার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২৯.২ ওভারে ১৮০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ভারতের। ৩০ ওভারে ১৮১/১ রান করে ভারত। এরপর অন্য ওপেনার লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান রুবেল হোসেন। তার গতির বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৯২ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৭৭ রান করেন রাহুল।

১৫ রানের ব্যবধানে রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সবশেষ পাঁচ ম্যাচে টানা ফিফটি তুলে নেয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে আউট করেন মোস্তাফিজ। তার আগে ২৭ বলে ২৬ রান করেন কোহলি। ব্যাটিংয়ে নেমে মোস্তাফিজের কাটারের দ্বিতীয় শিকার হার্দিক পান্ডিয়া।

২৩৭ রানে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার বিদায়ের পর জুটি গড়েন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রিশভ প্যান্ট। পঞ্চম উইকেটে তারা ৪০ রান যোগ করেন। সাকিব আল হাসানের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে ক্যাচ তুলে দেন প্যান্ট। তার আগে ৪১ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৪৮ রান করেন রিশব।

স্লো ওভারে অসাধারণ বোলিং করেন কাটার মাস্টার। তার গতির মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে ইনিংস গুটায় ভারত।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৪ রান করেন রোহিত শর্ম। আজ সেঞ্চুরি করার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে চারটি সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় এ ওপেনার। এছাড়া ৭৭ রান করেন লোকেশ রাহুল। ৪৮ রান করেন রিশব প্যান্ট। ৩৫ রান করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। বাংলাদেশ দলের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ৫৯ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন।

ভারতের দেয়া ৩১৫ রানের টার্গেট তারা করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্যকে হারিয়ে চাপের মুখে পরেছে টাইগাররা। ইনিংসের ১০ম ওভারে বোলিং করতে আসা শামীর বলে ২২ রান করে বোল্ড হন তামিম। উইকেটে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সৌম্যকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ১৫ তম ওভারে হার্দিক পান্ডের বলে কোহলির হাতে তালুবন্দি হন সৌম্য। এতে ৩৮ বলে ৩৩ রান করে সাঁজ ঘরে ফিরেন তিনি।

তৃতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান মুশফিকুর রহিম। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ সামির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জাতীয় দলের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান লিটন দাস। আগের বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে ছক্কা হাঁকানোর ঠিক পরের শট বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৪ বলে ২২ রান করেন তিনি।

ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ইনিংসের শুরু থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে খেলায় রেখে ছিলেন সাকিব আল হাসান। পান্ডিয়ার বলে ডাবল রান নেয়ার মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির পাশাপাশি চতুর্থ ফিফটি গড়েন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।

দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে তার ব্যাটে জয়ের ক্ষীণ স্বপ্ন দেখছিল টাইগার সমর্থকরা। ভালোয় ভালোয় খেলা সাকিব হঠাৎ করেই পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ তুলে দেন। তার আগে ৭৪ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৬৬ রান করেন সাকিব। তার বিদায়ে ৩৩.৫ ওভারে ১৭৯ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর দলের হাল ধরেন সাব্বির ও সাইফউদ্দিন। তাদের ব্যাটিংয়ে নতুন করে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তাইগার সমর্থকরা। সপ্তম উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান ৯.২ ওভারে করেন ৬৬ রান। বুমবার তার শেষ স্পেলের দ্বিতীয় বলেই সাব্বিরকে ৩৬ রানে ফিরিয়ে দেন। মূলত সেখানেই জয়ের সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে যায়। এর পর অধিনায়ক মাশরাফি, রুবেল কিংবা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ কেউই সেই স্বপ্নকে চাঙ্গা করতে পারেনি। ৪৭ তম ওভারের শেষ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।