টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় ঘটনা। বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গে এটিই বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর। রোববার গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং থিম্পু থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ চুক্তির মাধ্যমে ভুটান তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য এবং ইলেকট্রনিক্সসহ ১০০টি বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে ফলমূলসহ ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে।
বস্তুত দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকার (সাফটা) আওতায় এমনিতেই বাংলাদেশ ও ভুটান কিছু বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে আসছে। পিটিএর ফলে এর আওতা আরও বাড়বে। সেবা খাতের বাণিজ্যও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভুটানই এগিয়ে রয়েছে বেশি। ভুটানে আমাদের রফতানির পরিমাণ কম আর দেশটি থেকে আমাদের আমদানির পরিমাণ বেশি। কাজেই চুক্তি করে থেমে থাকলে চলবে না। বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যও আনতে হবে।
ভুটান আমাদের মংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। দেশটির সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগের উদ্যোগও রয়েছে। এসবই ইতিবাচক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দুই দেশের পর্যটন-সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা। বাংলাদেশ থেকে যতসংখ্যক পর্যটক ভুটানে যান, বাংলাদেশে আগত ভুটানি পর্যটকদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। দেশের পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারলে ভুটানের পর্যটকদের অধিকমাত্রায় আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
ভুটান আমাদের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী দেশই শুধু নয়, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই দেশটি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ভুটান। কাজেই ভুটানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আত্মিকও বটে। বাংলাদেশ ও ভুটান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কেরও সদস্য।
বর্তমানে সার্কের কার্যকারিতা প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ায় এখন দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয় দুটি গুরুত্বের সঙ্গে সামনে চলে এসেছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশেই এমন অনেক কিছু বিষয় ও পণ্য আছে, যা বিনিময়যোগ্য হয়ে উঠলে দুই দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটবে। যেমন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভুটান বেশ এগিয়ে গেছে। দেশটির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বড় সুযোগ রয়েছে আমাদের।
বস্তুত এ নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই আলোচনা চলছে। আমরা আশা করব, বিষয়টি অচিরেই চূড়ান্ত হবে। অন্যদিকে ভুটান বাংলাদেশের কাছ থেকে কৃষি, শিক্ষা, আইসিটি ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা পেতে পারে। উল্লেখ্য, ভুটানের অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়ালেখা করছেন। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও পড়াশোনা করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।
তিনি ভালো বাংলা বলতে পারেন। ফলে দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে এখন। বস্তুত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটির সম্প্রসারণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা ভুটানের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি।