টেকনাফ টুডে ডেস্ক : বাল্যবিবাহের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম। বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে তিন কোটি ৪৫ লাখ কিশোরীর আর ১৫ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে এক কোটি তিন লাখ কিশোরীর।
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফ পরিচালিত ‘বাল্যবিবাহ বন্ধের কার্যক্রম দ্রুততর করতে বৈশ্বিক কার্যক্রম’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের সর্বশেষ বৈশ্বিক চিত্রে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বে বেঁচে আছে বাল্যবিবাহের শিকার প্রায় ৬৪ কোটি নারী। প্রতিবছর বিশ্বে অন্তত এক কোটি ২০ লাখ কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়। পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের হার ছিল ২১ শতাংশ। বর্তমানে এই হার ১৯ শতাংশ। পাঁচ বছরে বাল্যবিবাহের হার কমেছে ২ শতাংশ। এই অগ্রগতির পরও ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ অবসানের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে বিশ্বে বাল্যবিবাহ কমানোর গতি ২০ গুণ বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাল্যবিবাহ রোধে অগ্রগতির পরও দক্ষিণ এশিয়ায় এখনও ১৮ বছর বয়সের আগে প্রতি চারজন কিশোরীর মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বালিকাবধূর সংখ্যার দিক থেকে সাবসাহারান আফ্রিকার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (২০ শতাংশ)। এই অঞ্চলে বর্তমানে যে গতিতে বাল্যবিবাহের হার কমছে, তাতে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি বন্ধ হতে ২০০ বছরের বেশি সময় লাগবে।
লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলও বাল্যবিবাহ রোধে পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ওই সব অঞ্চল বাল্যবিবাহের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চলে পরিণত হবে। বাল্যবিবাহ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার অগ্রগতিও স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাল্যবিবাহের বৈশ্বিক হার কমে আসায় বড় ভূমিকা রাখছে দক্ষিণ এশিয়া। এই অঞ্চলে বর্তমানে যে হারে বাল্যবিবাহ কমছে তাতে বাল্যবিবাহ অবসানে ৫৫ বছর সময় লাগবে। তবে এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের মোট বালিকাবধূর প্রায় অর্ধেকের (৪৫ শতাংশ) বসবাস। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ভারত এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। যদিও দেশটিতে এখনও বিশ্বের মোট বালিকাবধূর এক-তৃতীয়াংশের বাস।
বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। সংঘাতজনিত মৃত্যু ১০ গুণ বাড়ায় বাল্যবিবাহ ৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বৃষ্টিপাত ১০ শতাংশ কমবেশি হওয়ার কারণ বাল্যবিবাহ ১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। করোনার চলমান প্রভাবের কারণে বাল্যবিবাহ রোধের অর্জনগুলো হুমকিতে পড়েছে। এমনকি এটি আগের অবস্থায়ও ফিরে যেতে পারে। বাল্যবিবাহ যে পরিমাণে কমে আসছিল করোনা মহামারি তা এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, বিশ্ব একের পর এক সংকটে জর্জরিত। এসব সংকট ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের আশা ও স্বপ্নকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যেসব মেয়ের কনে হিসেবে নয়, শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার কথা তাদের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পরিবারগুলোকে বাল্যবিবাহের মতো মিথ্যা ধারণার আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি, বাল্যবিবাহের অবসানে অগ্রগতি সম্ভব। এ জন্য বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা মেয়ে ও তাদের পরিবারকে জোরালো সমর্থন প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশে অগ্রগতির পরও বালিকাবধূর সংখ্যা বিস্ময়কর। বাল্যবিবাহের মাধ্যমে অসংখ্য মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শিশুকন্যাদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।